ইসলামের 'দ্ব্বীন' বনাম 'ইনসাফ'
⚖️ "আমার নিজেরই বুঝতে কষ্ট হতো!" - ইসলামের 'দ্ব্বীন' বনাম 'ইনসাফ' - নোমান আলী খানের উপলব্ধি ইসলামের ইতিহাস, বিশেষ করে সাহাবাদের বিজয়ের প্রেক্ষাপট বোঝা বেশ জটিল। অনেক আলেমই এটাকে সরল ব্যাখ্যার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাতে প্রায়ই আরও বিভ্রান্তি বাড়ে। ওস্তাদ নোমান আলী খান নিজেই এই ভাষ্যে স্বীকার করেছেন যে, এই বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেও দীর্ঘদিন ধরে পড়াশুনা করেছেন কোনো ধারণায় পৌঁছাতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, "এই ইতিহাসটাকে সহজ-সরলভাবে বোঝানোর জন্য সবাই একটা সরলরেখা টানার চেষ্টা করে। আসল সত্য হলো, এটা জটিল।" তিনি জানান, এই বিষয়ে ড. জুলফিকারের একটি বিশ্লেষণ তাকে গভীরভাবে সাহায্য করেছে, যা পুরো চিত্রটি পরিষ্কার করে দেয়। সেই বিশ্লেষণটি কী? তা হলো ইসলামের দুটি ধারণাকে আলাদা করে বোঝা: ১. ইসলামের 'দ্ব্বীন' (Religion): এটা হলো আমাদের ব্যক্তিগত ইবাদত। যেমন: - নামাজ পড়া 🕌 - রোজা রাখা 🌙 - শুকরের মাংস বা অ্যালকোহল বর্জন করা। এই 'দ্ব্বীন' বা ধর্মীয় আচারগুলো কাদের জন্য? এগুলো একচেটিয়াভাবে মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য। ২. ইসলামের 'ইনসাফ' (Justice): এটা হলো ইসলামের সার্বজনীন বা বৈশ্বিক দিক। যেমন: - এতিমের অধিকার রক্ষা করা। - কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া বন্ধ করা। - ব্যবসায় মাপে কম না দেওয়া বা প্রতারণা না করা। 📈 - শিশুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করা। - জুলুমের অবসান ঘটানো। এই 'ইনসাফ' কার জন্য? এটা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের নয়। এটা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের জন্য। --- ### 🤔 সাহাবাদের অভিযানের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল? বক্তা এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন। সাহাবারা যখন বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল? - তাঁদের উদ্দেশ্য মানুষকে জোর করে 'শরিয়া' বা ধর্মীয় আইন মানতে বাধ্য করা ছিল না। - তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল সেইসব অঞ্চলের অত্যাচারী শাসকদের সরিয়ে সাধারণ, নির্যাতিত মানুষের জন্য 'ইনসাফ' (Justice) প্রতিষ্ঠা করা। তারা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। একারণেই, যখন তারা কোনো অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারতেন না, তখন অমুসলিমদের থেকেও নেওয়া 'জিযিয়া' (নিরাপত্তা কর) ফেরত দিয়ে দিতেন। --- ### 🚨 সবচেয়ে শক্তিশালী উদাহরণ: যখন 'ইনসাফ'-এর জন্য 'আইন' স্থগিত হলো! আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর সেই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। - ঘটনা:ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময়, যখন মানুষ না খেয়ে মরছিল, তখন খলিফা উমর (রাঃ) চোরের হাত কাটার মতো কুরআনিক শাস্তি (হদ) স্থগিত করে দিয়েছিলেন! - কেন? কারণ তিনি বুঝেছিলেন, ইসলামের আইন (Law) দাঁড়িয়ে থাকে ইনসাফ (Justice) এর ভিত্তির ওপর। - গভীর উপলব্ধি: যে সমাজে অর্থনৈতিক 'ইনসাফ' নেই, যেখানে রাষ্ট্র মানুষের মৌলিক খাবারের নিরাপত্তা দিতে পারছে না, সেখানে পেটের দায়ে চুরি করার জন্য "হাত কাটা"-এর আইন প্রয়োগ করাটাই হবে সবচেয়ে বড় 'অন্যায়' (Injustice)। --- আমরা পথ হারালাম কখন? সম্ভবত তখনই, যখন আমরা ইসলামের এই সার্বজনীন 'ইনসাফ'-এর কথা ভুলে গিয়ে শুধু 'দ্ব্বীন'-এর বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানকে আঁকড়ে ধরলাম এবং একসময় নিজেরাই সাম্রাজ্যবাদে পরিণত হলাম। ইসলামের আসল আত্মা হলো এই 'ইনসাফ'—যা সবার জন্য, সব যুগের জন্য। -- মূল আলোচনাঃ সুরা সাফ , আয়াত ৯ , বাইয়িনা টিভি

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন