‘সাফা’ এবং ‘মারওয়া’


 সূরা বাকারার ১৫৫-১৫৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন:

১৫৫। আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, ধন, প্রাণ এবং ফল-ফসলের স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। ১৫৬। নিশ্চয়ই যারা বিপদকালে বলে থাকে, ‘আমরা আল্লাহর জন্য আর আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী’। ১৫৭। এদের প্রতি রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে অনুগ্রহ ও করুণা আর এরাই হিদায়াতপ্রাপ্ত। ঠিক এই অংশটির পরেই আল্লাহ বলেন- "নিশ্চয়ই ‘সাফা’ এবং ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম। কাজেই যে ব্যক্তি কাবাগৃহের হাজ্জ অথবা ‘উমরাহ করবে, এ দু’টোর সায়ী করাতে তাদের কোনই গুনাহ নেই এবং যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন সৎ কাজ করবে তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ (তার ব্যাপারে) গুণগ্রাহী এবং সর্বজ্ঞ।" আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় সাফা মারওয়ায় সায়ী করার সাথে আগের আয়াতগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু যদি ভালোভাবে চিন্তা করেন... আমরা হাজেরা এবং ইসমাইল (আ) এর বিখ্যাত ঘটনার কথা জানি। ইসমাইলের জন্য পানি খুঁজতে তিনি এই দুই পাহাড়ের মাঝে সাত বার দৌড়াদৌড়ি করেন। সেই ঘটনার স্মরণে হজ্জ্ব এবং উমরা করার সময় এই দুই পাহাড়ের মাঝে আমরা সাত বার প্রদক্ষিণ করি, যাকে 'সায়ী' করা বলা হয়। এখন, এর আগে আল্লাহ আমাদের কোন কোন পরীক্ষায় পড়ার কথা বলেছেন? ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার পরীক্ষা। এখন দেখুন, হাজেরা (আ) কি ভয় পাচ্ছিলেন যে, পানির অভাবে ইসমাইল মারা যেতে পারে? হ্যাঁ। তাঁরা কি ক্ষুধার্ত ছিলেন? হ্যাঁ। এরপর ধনসম্পদের স্বল্পতা। তাঁদের কাছে কোনো ধন-সম্পদ কিছুই ছিল না। তারপর وَ الۡاَنۡفُسِ - প্রাণ। তাঁদের আশে পাশে কি কোনো মানুষ ছিল? না। وَ الثَّمَرٰتِ - ফল-ফসল। ঐ এলাকায় কোনো ফল ফলাদি ছিল? না। বিবি হাজেরা এবং ইসমাইল (আ) এর এই ঘটনা ভয়, ক্ষুধা, ধন, প্রাণ এবং ফল-ফসলের স্বল্পতার পরীক্ষার চূড়ান্ত কেইস স্টাডি। বিপদে পড়লে "ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন" পড়ার চূড়ান্ত কেইস স্টাডি এটা। আল্লাহ প্রথমে বিমূর্ত কিছু ধারণা তুলে ধরেন এরপর এই ধারণাগুলো কিভাবে জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে তাঁর একটি ব্যবহারিক উদাহরণ পেশ করেন। (abstract idea and practical example) কোন প্র্যাকটিকাল এক্সারসাইজ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিবে যে, আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁরই দিকে আমাদের প্রত্যাবর্তন? সাফা এবং মারওয়ার সায়ী। দুই পাহাড়ের মাঝে দৌড়াতে থাকো আর মনে রেখো, তোমার জীবনেও এমন কিছু থাকবে যা তুমি নিরুপায় হয়ে ধরতে চাইছো, কিছু একটা তুমি নিরুপায় হয়ে খুঁজছো, কিছু নিষ্কৃতি। কিছু একটা থেকে তুমি পালাতে চাইছো বা কিছু একটার দিকে তুমি এগিয়ে আসছো। তখন মনে রেখো, স্বস্তি কেবল আল্লাহর কাছ থেকেই আসে। জীবন মৃত্যু আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। যে ছুরির কাটার কথা আল্লাহ তাকে কাটতে নিষেধ করবেন। যে মরুভুমিতে পানির তৃষ্ণায় আপনার মৃত্যু হওয়ার কথা সে মরুভুমিই আল্লাহর হুকুমে পানি উৎপাদন করবে। এই ঘটনার আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো- এই ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহ বিবি হাজেরাকে সম্মানিত করেছেন। আমরা পুরুষেরাও একজন মহিলার সুন্নাহ অনুসরণ করছি যখন আমরা সাফা এবং মারওয়ার মাঝে প্রদক্ষিণ করি। আমরা যে শুধু আমাদের ওয়ান্ডারফুল মায়ের সুন্নাহ অনুসরণ করছি তাই নয়, আমরা পরিত্যক্ত এক নারীর যে নিরুপায় অবস্থায় পতিত তার সুন্নাহও অনুসরণ করছি। এর মাধ্যমে আসলে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা নিরুপায় অবস্থায় পতিত সকল পরিত্যক্ত নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন। সাফা মারওয়ায় সায়ী করার সময় যে একটি ব্যাপার সকল মুসলিমের অন্তরে আসার কথা তা হলো- কিভাবে নিজেদের স্বাভাবিক অবস্থার বাহিরে গিয়ে হলেও তাদেরকে নিরুপায় অবস্থায় পতিত নারীদের সাহায্য করা উচিত। নিরুপায় অবস্থায় পতিত মায়েদের সাহায্য করা উচিত। নিরুপায় অবস্থায় পতিত সন্তানদের সাহায্য করা উচিত। নারী এবং সন্তানকে হাইলাইট করার কারণ আছে। আল্লাহ যখন বলছেন "নিশ্চয়ই ‘সাফা’ এবং ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম, এগুলো এমন জিনিস যা আমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিবে। এর দ্বারা আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? সমগ্র পৃথিবী জুড়ে যত অভাবী নারী এবং অভাবী শিশু আছে তারা আল্লাহর নিদর্শন। তারা আমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাদেরকে সম্মান করা মানে সাফা মারওয়ার ঘটনাকে সম্মান করা। - নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে। - 057. Al-Baqarah (Ayah 152-153) - A Deeper Look - বায়্যিনাহ টিভি।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট