আত্মীয়দের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক


 আত্মীয়দের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার ফযীলতঃ রিযিক পাওয়ার এবং তা বৃদ্ধি হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পিতা-মাতার সাথে সৎ ব্যবহার করা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি চায় যে বা, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার রিজিক আল্লাহ তাআ’লা প্রশস্ত করে দেন এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক; তাহলে সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখে।” সহীহ বুখারীঃ ৫৯৮৫, সহীহ মুসলিমঃ ৪৬৩৯।

হাদীসে উল্লেখিত “তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক” এই কথার অর্থ কি? এই কথার প্রথম ব্যাখ্যা হচ্ছেঃ তার শারিরীক ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে, সে সবসময় সুস্থ থাকবে। দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হচ্ছে, তার বয়সে বরকত হবে। তৃতীয় ব্যাখ্যা হচ্ছে, তার মৃত্যুর পরেও তার সুনাম বা তার সম্পর্কে ভালো কথা জারি থাকবে। আর চতুর্থ ব্যাখ্যা হচ্ছে, সে যদি আত্মীয়তার সম্পর্কে বজায় রাখে তাহলে তার আয়ু বৃদ্ধি করা হবে। আলেমগণ এই ব্যাখ্যাকে অধিক পছন্দ করেছেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা বলতে কি বুঝায়? শায়খ আব্দুর রাক্বীব বুখারী হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন, “আত্মীয় অনেক ধরণের হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় আত্মীয় হচ্ছে ‘রেহেম’-এর আত্মীয়। সবচেয়ে বড় আত্মীয় হচ্ছে যার ঔরস থেকে একজন মানুষ পৃথিবীতে এসেছে, সেটা পিতা-মাতা থেকে শুরু, তারাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় আত্মীয়। এছাড়া আপনার চাচা-চাচী, ফুফা-ফুপি, মামা-মামী, গ্রামের প্রতিবেশী, এমনকি বন্ধু; এসকলই আত্মীয়তার বন্ধন। যদি কেউ আত্মীয়তা বজায় রাখে তাহলে তার রিযিক বৃদ্ধি হয়। আত্মীয়তা অনেক বড় বিষয়। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার মানে এটা নয় যে, আপনার সবকিছু আত্মীয়দেরকে দিয়ে দিতে হবে। না, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার অর্থ হচ্ছেঃ আত্মীয়দেরকে যিয়ারত করা, আপনি তাদেরকে দেখতে তার বাসায় গেলেন, তাদের খোঁজ খবর নিলেন, যতখানি পারলেন সাহায্য করলেন, যতখানি পারলেন ভালো উপদেশ দিলেন। আজকাল মানুষ কখন আত্মীয়তা বজায় রাখে জানেন? খাতনার অনুষ্ঠানে, আকীকার অনুষ্ঠানে, বিবাহের অনুষ্ঠানে - ঐ সময় মানুষ আত্মীয়তার খোঁজ নিতে আসে। তারা চিন্তা করে, আত্মীয়দেরকে দাওয়াত দিলে তারা কিছু উপহার দিয়ে যাবে (এই আশায় দাওয়াত দেয়)। আত্মীয়তার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র লেন-দেনের সম্পর্ক; এমন হওয়া উচিত নয়। কেউ পারলে উপহার দিবে, না পারলে দেবে না। এইজন্য আমাদের আত্মীয়তা শুধুমাত্র ধনীদের সাথেই, গরীবদের সাথে আমরা কোন আত্মীয়তা রাখতে চাই না।” আত্মীয়তার ফযীলত সংক্রান্ত আরো কিছু হাদীসঃ (১) অন্য বর্ণনায় এসেছে, إن صلة الرحم محبة في الأهل، مثراة في المال، منسأة في الأثر “নিশ্চয় আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার মধ্যে রয়েছে পরিবারের ভালোবাসা, সম্পদের বরকত এবং হায়াতে বরকত।” (২) ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল রহি’মাহুল্লাহ আ’য়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহা থেকে মারফূ’ সনদে বর্ণনা করেছেন, صلة الرحم وحسن الجوار وحسن الخلق يعمران الديار ويزيدان في الإعمار “আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার, উত্তম চরিত্র, সংসার জীবনকে আনন্দঘন করে তোলে এবং জীবনে বরকাত বয়ে আনে।” (৩) আবদুল্লাহ ইবনু আহমাদ ‘‘যাওয়ায়িদুল মুসনাদ’’ নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন, ويدفع عنه ميتة السوء “মৃত্যুকালীন খারাপ অবস্থা তার থেকে দূর করা হয়।” অর্থাৎ যারা আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে তাদের ভালো মৃত্যু প্রদান করা হবে। (৪) ইমাম আবী ইয়া’লা আনাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে মারফূ’ সূত্রে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, হাদীসটি হচ্ছে, إن الصدقة وصلة الرحم يزيد الله بهما في العمر، ويدفع بهما ميتة السوء “দান খয়রাত করা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা - এই দু’টি কাজের মাধ্যমে আল্লাহ তাআ’লা তার হায়াত বৃদ্ধি করে দেন, (অর্থাৎ জীবনে বরকত দান করেন।) আর খারাপ মৃত্যু দূর করে দেন (অর্থাৎ ভালো মৃত্যু দেন)। উপরোক্ত হাদীস সমূহ শায়খ উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী রহি’মাহুল্লাহ প্রণীত মিশকাতুল মাসাবীহ-এর শারাহ মিরআতুল মাফাতীহ হতে সংগৃহীত।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট