রিয়াজুল জান্নাহ

 


রিয়াজুল জান্নাহ বা রওযা শরীফঃ আমাদের দেশের মানুষেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কবরকে ‘রওজা’ বা ‘রওযা শরীফ’ বলে ডাকে। এটা ভুল, কারণ রওযা হচ্ছে রাসুলুল্লাহর কবরের পর থেকে রাসুলুল্লাহর মসজিদের মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান, যেখানে আল্লাহর রাসুলের মূল মসজিদ অবস্থিত ছিলো। আরবীতে এটাকে বলা হয় রিয়াজুল জান্নাহ। রিয়াজ অর্থ বাগান, জান্নাহ অর্থ জান্নাত। অর্থ হচ্ছে, জান্নাতের বাগানের মধ্যে একটা বাগান। এই স্থানটুকু দুনিয়াতে জান্নাতের একটা বাগান বা টুকরা বলা হয় কারণ, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার ঘর ও মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থানটুকু জান্নাতের বাগানগুলোর মধ্যে একটি বাগান।” সহীহ আল-বুখারীঃ ১১৯৫।

নাবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানগুলোর একটি বাগান, আর আমার মিম্বর অবস্থিত আমার হাউযে (কাউসার)-এর উপরে অবস্থিত।” সহীহ আল-বুখারীঃ ১১৯৬। যারা মসজিদে নববী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নামায পড়ার জন্য আসবেন, তারা চেষ্টা করবেন ছোট্ট এই জায়গাতে ফরয, সুন্নত বা নফল যে কোন নামায পড়া ও দুয়া করার জন্য। এই জায়গাটা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ, যেখানে ইবাদত করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও দয়া নাযিল হয়। কিছু আলেমের মতে, এখানে ইবাদত করলে তা বান্দাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আবার অনেক আলেমের মতে, এই স্থানটুকু সত্যিই আখিরাতে জান্নাতের সাথে যুক্ত করা হবে। মসজিদে নববীতে ছোট্ট এই একটা ফযীলতপূর্ণ জায়গায় ইবাদতের জন্য অনেকে ভীড় করেন, এ কারণে সেখানে প্রবেশ করা কিছুটা কঠিন, বিশেষ করে রমযান এবং হজ্জের মৌসুমে রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশ করতে পারা আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। রিয়াজুল জান্নাতে ইবাদত করে বিশেষ প্রশান্তি ও আল্লাহর নৈকট্য অনুভব করা যায়, যা “মাতাফ” অর্থাৎ কাবা শরীফের চতুর্দিকে তাওয়াফের স্থান, লায়লাতুল ক্বদরের রাতে, সিজদা বা এমন বিশেষ মুহূর্তগুলোতে অনুভব করা যায়। এ কারণে সাধারণ মুসলমানদের অনেকে সেখানে গিয়ে আবেগের আতিশয্যে অনেক ভুল ও বিদআ’তী আমল করে থাকে। আল্লাহু মুস্তাআ’ন! নারীদের রিয়াজুল জান্নাহ জিয়ারত করার সুযোগ দেওয়ার জন্য এশার নামাযের পর পর্দা দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, আলহা’মদুলিল্লাহ। আমাদের মতো সাধারণ মুসলমানেরা রিয়াজুল জান্নাতে জীবনে এক বার প্রবেশ করতে পারাকে ভাগ্যের বিষয় মনে করি। এর পাশাপাশি চিন্তা করে দেখুন, মদীনার মসজিদের সম্মানিত ইমাম যেমন আল-হুযাইফী, আব্দুল মুহ’সিন আল-ক্বাসিম তাঁদের কথা, যারা সেই ফযীলতপূর্ণ জায়গায় প্রতিদিন ফরয নামাযে উপস্থিত সমস্ত মুসল্লিদের ইমামতি করছেন, জুমুআ’হর খুতবাহ দিচ্ছেন, যাদের জন্য রিয়াজুল জান্নাতে সবার প্রথম কাতারে স্থান সংরক্ষিত থাকে। সুবহা’নাল্লাহ! আল্লাহ তাঁদের সম্মান আরো বৃদ্ধি করে দিন এবং তাদেরকে হেফাজত করুন আমিন। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে দুনিয়াতে জান্নাতের ছোট্ট ও সুন্দর এই জায়গাতে বসে মহান আল্লাহর কাছে আমাদের মনে চাওয়াগুলো ব্যক্ত করার তোওফিক দান করুন, আমিন।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট