সুরা আলায় আখিরাতকে স্মরণ

 


সুরা আলা পবিত্র কোরআনের ৮৭তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। ১ রুকু, ১৯ আয়াত। সুরার শুরুতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি, সংগঠন ও নিয়ন্ত্রণ করে পথ দেখিয়েছেন। রাসুল (সা.) কখনো তাঁর আদেশ ভুলে যাবেন না। আল্লাহর অসীম জ্ঞানের কথা উল্লেখ করে মানুষকে সৎ উপদেশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহকে যে ভয় করে, সে মহানবীর (সা.) উপদেশ গ্রহণ করবে এবং পরকালে সফল হবে।

সুরার ১ থেকে ৫ আয়াতে আল্লাহ সৃজনশীলতার কথা বলা হয়েছে। তিনি সংগঠন ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানবজাতিকে পথ দেখিয়েছেন। সমগ্র মানবজাতির প্রতি তাঁর অনুগ্রহ ও অবদানের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর ৬-৯ আয়াতে আল্লাহ নবী মুহাম্মদ (সা.) এর উপর তাঁর অবদান ও উপদেশের কথা বলেছেন। ১০-১৫ নম্বর আয়াতে সব মানুষের প্রতি দেওয়া আল্লাহর উপদেশ মান্য ও অমান্য করার ফলাফল দুনিয়া ও আখিরাতে কী হবে, তা বর্ণনা করা হয়েছে। ১৬-১৭ আয়াতে আল্লাহ উপদেশ দিয়েছেন। দুনিয়াকে আখিরাতের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার কারণেই এই অমান্যতা। সবশেষে আল্লাহ বলেছেন, তাঁর এই উপদেশ মানুষের জন্য চিরন্তন। অন্যান্য জাতির প্রতিও একই উপদেশ।

সুরা আলার শুরুতেই আল্লাহ তাঁর সুমহান নামের পবিত্রতা বর্ণনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

আখিরাতের বর্ণনা

এ সুরায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। শুরুর আয়াতগুলোতে আল্লাহর সত্তা এবং তার গুণাবলির তাসবিহ ও পবিত্রতা বর্ণনা করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে সর্বোত্তম আকার দিয়েছেন এবং সফলতা ও ঈমানের পথ দেখিয়েছেন।

কোরআন মুখস্থ করা সহজ হওয়ার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.)–কে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আপনি চারিত্রিক পবিত্রতা ও আত্মিক পরিশোধনের জন্য কোরআনের মাধ্যমে নসিহত প্রদান করুন। যার অন্তরে আল্লাহর ভয়ভীতি থাকবে তার অবশ্যই নসিহত কবুল হবে।’

কোরআনে আছে, ‘আমি তোমাকে আবৃত্তি করাব যাতে তুমি ভুলে না যাও, আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। নিশ্চয় তিনি জানেন যা প্রকাশ করা হয়েছে ও যা প্রকাশ করা হয়নি। আমি তোমার জন্য পথ সহজতম করে দিয়েছি। সুতরাং তুমি উপদেশ দাও, যদি সে উপদেশ কাজে লাগে। যে ভয় করে সে উপদেশ গ্রহণ করবে। যে নিতান্তই হতভাগ্য সে তা উপেক্ষা করবে। সে মহা আগুনে প্রবেশ করবে। তারপর সেখানে সে মরবেও না, বেঁচেও থাকবে না।'সুরার শেষে বলা হয়েছে, যে-ব্যক্তি নিজেকে পাপ থেকে পবিত্র রাখবে সে ভালো আগ্রহ ও চিন্তাচেতনার অধিকারী হবে। তার অন্তরে আল্লাহর মহত্ত্ব সৃষ্টি হবে। সে দুনিয়াকে আখেরাতের ওপর প্রাধান্য দেবে না। সে সফল হবে। সমস্ত সহিফা ও শরিয়তে এই মূলনীতিই উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআনে আছে, ‘নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে, (কারণ) সে পবিত্র আর তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও নামাজ পড়ে। তবু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দাও, যদিও পরবর্তী জীবন আরও ভালো ও স্থায়ী। এ তো (লেখা) আছে পূর্বের গ্রন্থে, ইব্রাহিম ও মুসার গ্রন্থে।’ (আয়াত: ১৪–১৯, কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)


সুরা ইখলাসের অসামান্য ফজিলত

সুরা ইখলাস পবিত্র কোরআনের ১১২তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর রুকু ১, আয়াত ৪। এই সুরায় তওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণার পর আল্লাহর সন্তানসন্ততি আছে বলে যে ভ্রান্ত ধারণা করা হয়, তার প্রতিবাদ করা হয়েছে। আল্লাহ সব অভাবের অতীত এবং তাঁর কোনো তুলনা নেই। এই সুরায় আল্লাহর অস্তিত্ব ও সত্তার অনুপম ব্যাখ্যা রয়েছে। এটি কোরআনের অন্যতম ছোট সুরা হিসেবেও বিবেচিত হয়ে থাকে। তবে এই সুরাকে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান বলা হয়। ইখলাস অর্থ গভীর অনুরাগ, একনিষ্ঠতা, নিরেট বিশ্বাস, খাঁটি আনুগত্য। শিরক থেকে মুক্ত হয়ে তওহিদ বা এক আল্লাহর ওপর খাঁটি ও নিরেট বিশ্বাসী হওয়াকে ইখলাস বলা হয়।অবিশ্বাসীরা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহর বংশপরিচয় জিজ্ঞেস করেছিল। সে প্রশ্নের জবাবে এ সুরা নাজিল হয়। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে আছে যে তারা আরও প্রশ্ন করেছিল, আল্লাহ তাআলা কিসের তৈরি? সোনা, রূপা নাকি অন্য কিছুর? এর সুগভীর জবাব সুরাটিতে আছে।

সুরা ইখলাসের ফজিলত অনেক। সুরা ইখলাস যিনি ভালোবাসবেন, তিনি জান্নাতে যাবেন। হাদিসে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে আরজ করলেন, আমি এই সুরাকে ভালোবাসি, রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সুরা ইখলাসের প্রতি ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে দাখিল করবে। (মুসনাদে আহমদ: ৩/১৪১)

হাদিসে আছে, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা সবাই একত্র হয়ে যাও, আমি তোমাদের কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ শোনাব। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) সুরা ইখলাস পাঠ করলেন। (মুসলিম, তিরমিজি)হাদিসে আরও আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে সকাল-বিকেল সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে, তা তাকে বালা-মুসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট হয়। (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ি)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুমানোর আগে কুলহু আল্লাহু আহাদ, কুল আউযু রাব্বিল ফালাক, কুল আউযু বিরাব্বিন নাস পড়ার কথা বলেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার সময় তাঁর দুই হাতের তালু একত্র করে তাতে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। এরপর দুই হাতের তালু দিয়ে শরীরে যতটুকু সম্ভব হাত বুলিয়ে দিতেন। এভাবে তিনবার করতেন। (বুখারি, আবু দাউদ, তিরমিজি)

সুরা ইখলাসের অর্থ

বলো, তিনি আল্লাহ (যিনি) অদ্বিতীয়।

আল্লাহ সবার নির্ভরস্থল।

তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি।

আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে