আল-কারীম
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার একটি নাম হলো আল-কারীম। মূল শব্দ 'কারাম।' এখন 'কারাম' বলতে আসলে কী বুঝায়? বিখ্যাত ভাষাবিদ ইবনে মিসকাওয়ে বলেন- 'কারাম' হলো অন্তরে কোনো ধরণের খারাপ অনুভব করা ব্যতীত প্রচুর পরিমাণে ব্যয় করা। প্রতিটি উপকারী এবং কল্যাণকর উদ্যোগে ব্যয় করা। তাহলে তাঁর মতে, কারাম মানে শুধু দানশীলতা নয় বরং অতি মাত্রায় দানশীলতা। কোনো কৃপণতা অনুভব করা ছাড়া বা দান করে ফেলার পর অনুশোচনা অনুভব করা ছাড়া দান করা। " ধুর! কেন ঐখানে এতো টাকা দান করে ফেললাম!" এমন কিছু অনুভব করা ছাড়া দান করার নাম হলো 'কারাম।' বরং দান করার পরে আপনি ভালো অনুভব করেন। আর আপনি প্রতিটি উপকারী প্রজেক্টে দান করেন। ইমাম গাজ্জালীর মতে- 'কারাম' হলো দয়াদ্র মনে দানশীলতা প্রদর্শন করা। আপনার কাছে চাওয়ার পূর্বেই আপনি দান করেন। এমনকি প্লেটের খাবারও। আর কেউ যদি আপনার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসও আপনার কাছে চায়, আপনি তার সাথে ভদ্র আচরণ করেন। তাহলে 'কারাম' হলো ম্যাগন্যানিমাসলি দান করা। ম্যাগন্যানিমাসলি মানে- দান করার সময় আপনার অন্তর উদারতাটা অনুভব করে, একটি ভালো লাগা অনুভব করে। এমন কারো মত না যে দান করার পরে অনুশোচনায় ভোগে। 'আহারে! কেন আমি এতো টাকা দান করে ফেললাম।' এরকম অনুভব করলে এটা আর 'কারাম' থাকলো না। 'কারাম' হলো আপনি দান করার পর এক ধরণের প্রশান্তি অনুভব করেন। নিজের দানশীলতা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভোগেন না। আর আপনার কাছে চাওয়া ব্যতীতই আপনি দান করেন, নিজের দামী জিনিসটাও দান করে দেন। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসও আপনি দান করে দেন; আর এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ের কারাম। তাহলে আল-কারীম কে? মানে আল্লাহর নাম আল কারীম বলতে কী বুঝায়? আল-কারীম হলো এমন এক সত্ত্বা-- যিনি কোনো বিনিময় ছাড়াই দান করে যান। যিনি কোনো কারণ ছাড়াই দান করে যান। যিনি তাঁর কাছে চাওয়া ছাড়াই দান করে যান। তিনি এমন সত্ত্বা যিনি সবাইকে দান করেন। যাকে দান করা হচ্ছে তার অবস্থা যাই হোক না কেন, সে ধার্মিক হোক বা না হোক তিনি দান করার সময় তার কোনো পরোয়া করেন না। এমনকি লোকটি মুসলিম বা কাফের হোক তার দান থেকে কেউ বাদ যায় না। তাহলে আল-কারীম হলো এমন একজন যিনি সবাইকে সবকিছু দান করেন, অগণিত পরিমাণে, কোনো প্রশ্ন করা ছাড়া আর তিনি প্রতিনিয়ত দিয়ে যান। আমাদের স্কলাররা আরো বলেন, আল-কারীম হলো এমন এক সত্ত্বা যিনি তাঁর দান থেকে কেউ ভালো মনে কিছু ফেরত দিলে তিনি তা গ্রহণ করে নেন। আর তিনি দানশীল ব্যক্তির এই দানের প্রশংসা করেন। যদিও প্রথমে তিনিই ঐ ব্যক্তিকে টাকাটা দিয়েছিলেন। এর দ্বারা আমি কী বুঝাচ্ছি? একদিন বিখ্যাত সুফী জুনাইদ (র) শুনতে পেলেন কেউ একজন আইয়ুব আলাইহিস সালামের প্রশংসামূলক কুরআনের একটি আয়াত তিলাওয়াত করছে- اِنَّا وَجَدۡنٰهُ صَابِرًا ؕ نِعۡمَ الۡعَبۡدُ ؕ اِنَّهٗۤ اَوَّابٌ - "আমি তাকে পেয়েছিলাম পূর্ণ ধৈর্যশীল, কতই না উত্তম বান্দাহ, প্রকৃতই (আল্লাহ) অভিমুখী।" ৩৮:৪৪ এটা শুনে জুনাইদ কাঁদতে শুরু করলেন। মানুষ জিজ্ঞেস করলো আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন- তোমরা কি এটা শুনে অবাক হওনি? আল্লাহ তাঁর উদারতা থেকে আইয়ুব আলাইহিস্ সালামকে ধৈর্য দান করেছিলেন। আর আইয়ুব যখন এ ধৈর্য প্রদর্শন করেছিলেন আল্লাহই আবার তাঁর ঐ ধৈর্যের প্রশংসা করছেন এ বলে 'নি'মাল আব্দ' -কতই না উত্তম বান্দাহ। তো যিনি তাঁকে ধৈর্য দান করেছিলেন তিনিই তা তাঁর কাছ থেকে গ্রহণ করে নিলেন। এরপর আবার তাঁর প্রশংসাও করলেন এ বলে যে, সে আমার কতইনা উত্তম বান্দাহ। আমাদের সুমহান রব কেমন বিস্ময়কর কারীম, যিনি নিজেই তোমাকে একটি জিনিস দান করেন এরপর তুমি তাকে কিছুটা ফেরত দিলে তিনি তা গ্রহণ করে নেন এবং তিনিই আবার এ দানের জন্য তোমার প্রশংসা করেন। আল্লাহ এতোই কারীম যে, আপনি যদি তাঁর কাছে কিছু চান তিনি তা দারুণ ভালোবাসেন। বস্তুতঃ আপনি যদি তাঁর কাছে না চান এতে তিনি অসন্তুষ্ট হন। এমনকি আপনি যদি তাঁর কাছে ছাড়া অন্য কারো কাছে চান এটি কখনো কখনো শির্ক হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ আপনি যদি কোনো মূর্তির কাছে চান তখন এটি শির্ক হয়ে যাবে। আর যদি কোনো মানুষের কাছে কিছু চান তখন জেনে রাখুন যে, ঐ মানুষটির মাধ্যমে আল্লাহ-ই আপনাকে সাহায্য করছেন। এমনকি হাদিসে এসেছে- ''যখন আল্লাহর কাছে চাইবে তখন বেশি বেশি চাইবে।'' যদি এক মিলিয়ন ডলার চাওয়ার কথা মাথায় আসে, দশ মিলিয়ন চান। যখন জান্নাত চাইবেন তখন একেবারে কোনোমতে সবার শেষে জান্নাতে প্রবেশকারী হতে চাইবেন না, বরং আল্লাহর কাছে জান্নাতুল ফিরদাউস চান। কারণ আপনি এমন একজনের কাছে চাচ্ছেন যিনি হলেন আল-কারীম, অতিশয় উদার। তাই, আল-কারীমের কাছে চাইতে কার্পণ্য করবেন না। অল্প কিছু চাইবেন না, বেশি বেশি চান। আল-কারীমের আরেকটি অর্থ হলো: মর্যাদাবান এবং সম্মানিত। এই অর্থে আল্লাহর আরশকে বলা হয় 'আরশিল কারীম।' অর্থাৎ সম্মানিত আরশ। - শায়েখ ইয়াসির কাদির আলোচনা থেকে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন