যোগ্য নেতৃত্বের মহৎ গুণাবলি


 সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে প্রয়োজন হয় নেতৃত্বের। যোগ্য নেতৃত্বের জন্য রয়েছে কিছু মহৎ গুণ। জীবনে সফল ব্যক্তিই নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাই সফল নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজন বিশ্বাস, সৎকর্ম, কল্যাণকামিতা ও সহিষ্ণুতা।

কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘সময়ের শপথ! নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে; তবে তারা নয়, যারা বিশ্বাস করে, সৎকর্ম করে, একে অন্যকে সত্যের উপদেশ দেয় এবং ধৈর্যধারণে পরামর্শ দেয়।’ (সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১-৩)

মানবসভ্যতার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতৃত্বের উদাহরণ শেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)। সত্যতা, পবিত্রতা, বিশ্বাস, আশা ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ ছিল তাঁর জীবন।

নেতাকে হতে হবে স্নেহশীল ও দয়ালু। নবী করিম (সা.)–এর বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন এমন রাসুল, তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁর পক্ষে দুঃসহ, তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, বিশ্বাসীদের প্রতি স্নেহশীল, দয়ালু।’ (আত–তাওবা, আয়াত: ১২৮)

নেতা যদি দয়ার্দ্র হন, তবেই সমাজে সর্বত্র শান্তি বিরাজ করবে। তাই নেতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিচক্ষণ হতে হবে। নেতার গুণগুলো যাচাই করে নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে—নেতা কঠিন হবেন না।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী! আপনি যদি কর্কশভাষী, রূঢ় প্রকৃতির ও কঠোর স্বভাবের হতেন; তবে লোকেরা আপনার আশপাশ ছেড়ে চলে যেত।’ (সুরা আল–ইমরান, আয়াত: ১৫৯)

নেতাকে সবার হিতাকাঙ্ক্ষী হতে হবে। হজরত জাবের (রা.) বলেন, ‘সাহাবিগণ (রা.) আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! সাকিফ গোত্রের তিরগুলো আমাদের শেষ করে দিল। আপনি তাদের জন্য বদদোয়া করুন।’ তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ! সাকিফ গোত্রকে হিদায়াত দান করুন।’ (তিরমিজি: ৩৯৪২)

নেতাকে সবার সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করতে হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) অপেক্ষা অধিক নিজের সঙ্গীদের সঙ্গে পরামর্শ করতে আমি কাউকে দেখিনি।’ (তিরমিজি: ১৭১৪)

রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি পরামর্শ করে, সে সোজা পথের ওপর থাকে, আর যে ব্যক্তি পরামর্শ করে না, সে চিন্তাযুক্ত থাকে।’ (বায়হাকি, খণ্ড: ৬, পৃষ্ঠা: ৭৬)

নেতা সুসংবাদ শোনাবেন। হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে সহজ আচরণ করো এবং কঠিন আচরণ কোরো না; সুসংবাদ শুনাও, বিমুখ কোরো না।’ (বুখারি: ৬৯)

হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘আমার এ ঘরে রাসুল (সা.)–কে দোয়া করতে শুনেছি, “আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের যেকোনো কাজে দায়িত্বশীল হিসেবে নিযুক্ত হন এবং লোকদের সঙ্গে নম্র ব্যবহার করেন, আপনিও তাঁর সঙ্গে নম্র ব্যবহার করুন।”’ (মুসলিম: ৪৭২২)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান জনগোষ্ঠীর নেতা হন, অতঃপর তাঁদের সঙ্গে প্রতারণামূলক কাজ করেন এবং ওই অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়; তবে আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (বুখারি)

হাদিসে আরও আছে, ‘যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের কোনো কাজের নেতা বানিয়েছেন, আর সে মুসলমানদের অবস্থা, প্রয়োজনগুলো ও তাদের অভাব–অনটন থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার অবস্থা ও প্রয়োজনগুলো এবং অভাব–অনটন থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবেন।’ (আবু দাউদ: ২৯৪৮)

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা যোগ্য নেতৃত্বের প্রধান দায়িত্ব। হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো কওম বা জামায়াতের মধ্যে কোনো ব্যক্তি কোনো গুনাহের কাজে লিপ্ত হন এবং ওই কওম বা জামায়াতের মধ্যে শক্তি থাকা সত্ত্বেও তাঁকে বাধা না দেন, তাহলে মৃত্যুর আগে দুনিয়াতেই তাঁদের ওপর আল্লাহর আজাব এসে যাবে।’ (আবু দাউদ)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে দলের নেতা নিযুক্ত করল, কিন্তু তার চেয়ে বেশি আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্টকারী ব্যক্তি বিদ্যমান রয়েছে, সে (নিযুক্তকারী) আল্লাহ তাআলার সঙ্গে খেয়ানত করল, রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর সঙ্গে খেয়ানত করল এবং ইমানদারদের সঙ্গে খেয়ানত করল।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ৯২)

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে