আল্লাহর কাছে দুআ


 কুরআনে এসেছে আমরা আল্লাহর কাছে এই বলে দুআ করি— وَ قِنَا عَذَابَ النَّارِ - এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন’।

এই বাক্যাংশটি কুরআনে মাত্র দুইবার এসেছে। সূরা বাকারায় এবং সূরা আলে ইমরানে। সূরা বাকারায় এসেছে-- رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ - "হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।" (২:২০১) আর সূরা আলে ইমরান এসেছে— رَبَّنَاۤ اِنَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوۡبَنَا وَ قِنَا عَذَابَ النَّارِ - ‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা ঈমান আনলাম। অতএব, আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন’। (৩:১৬) সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে, এখানে কুরআন আমাদেরকে একই মুদ্রার উভয় পিঠ প্রদর্শন করছে। এর মূল কথা হলো আমরা জাহান্নামে যেতে চাই না। তার মানে—কেউ যদি জাহান্নামে না যায় সে অটোম্যাটিক্যাল্ল্যি জান্নাতে যাবে। জান্নাতে যাওয়ার কথাটা আলাদা করে আর বলতে হচ্ছে না। কিন্তু এর রয়েছে দুইটি পার্শ্ব। এক পাশে, অর্থাৎ সূরা বাকারায় আমরা আল্লাহর কাছে এ দুনিয়ার কল্যাণ এবং পরকালের কল্যাণ চাই। আর দোজখের আগুন থেকে রক্ষা পেতে চাই। আর অপর পাশে অর্থাৎ আলে ইমরানের এ আয়াতে আমরা বলছি—আমরা ঈমান আনলাম। অতএব, আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন’। কিভাবে এগুলো একই মুদ্রার দুই পিঠ? আমরা এখানে শিখছি যে, পার্থিব কল্যাণ এবং পারলৌকিক কল্যাণের গ্যারান্টি তখনই পাওয়া যায় যখন আপনি ঈমানের পথ ধরেন এবং এর ফলে সব ধরণের পাপ কর্ম থেকে বিরত থাকেন। আর কখনো কোনো পাপ হয়ে গেলে আপনি সাথে সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। এভাবে যদি ঈমান এবং ইস্তেগফারের এক জীবন যাপন করেন, তবে আপনি এ দুনিয়ার কল্যাণ যেমন পাবেন আবার পরকালের কল্যানও পাবেন। এগুলো একই মুদ্রার দুই পিঠ। একজন ঈমানদারের জন্য আগুনের আজাব থেকে বাঁচার চাবি এটাই। এটাই আসলে, "রাব্বানা আ-তিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানা। ওয়া কীনা আজাবান না-র।" এই দুনিয়াতে এমন কিছু করুন যা আপনার দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জগতে আপনাকে সাহায্য করবে। যে ঈমান আপনার আছে তা আপনাকে দুনিয়াতে যেমন সাহায্য করবে তেমনি আখিরাতেও সাহায্য করবে। আপনার ইস্তেগফার আপনাকে দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জগতে সাহায্য করবে। আমি আগে যেমন বলেছি, কেউ যদি ইস্তেগফারের মানুষে পরিণত হয়, আপনি যদি এমন মানুষে পরিণত হোন যে সর্বদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তখন আল্লাহ আপনার জন্য কল্যাণের সমস্ত দরজা খুলে দিবেন। یُّرۡسِلِ السَّمَآءَ عَلَیۡکُمۡ مِّدۡرَارًا - তিনি অজস্র ধারায় তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। وَّ یُمۡدِدۡکُمۡ بِاَمۡوَالٍ وَّ بَنِیۡنَ وَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ جَنّٰتٍ وَّ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ اَنۡهٰرًا - "তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন এবং এবং তোমাদের জন্য প্রবাহিত করবেন নদীনালা।" (সূরা ৭১, আয়াত, ১১-১২) মানুষ যেগুলোর পেছনে পাগলের মত ঘুরে বেড়ায় আপনাকে তা এমনিতেই প্রদান করা হবে শুধু যদি আপনি ইস্তেগফারের মানুষে পরিণত হতে পারেন। এভাবে দুনিয়া হয়ে পড়ে 'হাসানা' আবার আখিরাতও হয়ে যাবে 'হাসানা'। এ জন্য আল্লাহ আগের যুগের মুসলমানদের বলেছিলেন- وَ لَوۡ اَنَّهُمۡ اَقَامُوا التَّوۡرٰىۃَ وَ الۡاِنۡجِیۡلَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡهِمۡ مِّنۡ رَّبِّهِمۡ لَاَکَلُوۡا مِنۡ فَوۡقِهِمۡ وَ مِنۡ تَحۡتِ اَرۡجُلِهِمۡ -- তারা যদি তাওরাত ইঞ্জিল আর তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তার নিয়ম-বিধান প্রতিষ্ঠিত করত, তাহলে তাদের উপর থেকে আর তাদের পায়ের নীচ থেকে আহার্য পেত। (৫:৬৬) যদি তারা শুধু ওহী অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতো তাহলে সমৃদ্ধ জীবন পেতো। ওহীর উদ্দেশ্য আপনাকে পার্থিব সুখ থেকে বঞ্চিত করা নয়। বরং এর উদ্দেশ্য হলো এই পার্থিব সুখগুলিকে পরকালের চিরস্থায়ী সুখের সোপানে পরিণত করা। সুতরাং, আল্লাহ চান আমরা যেন এখানে একটি ভালো জীবন পাই এবং পরকালেও একটি উত্তম জীবন পাই। খ্রিস্টানদের ধারণা হলো এ জীবন একটি অভিশাপ। কিন্তু ইসলামের শিক্ষা এটা নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন-- وَ جَعَلۡنَا لَکُمۡ فِیۡهَا مَعَایِشَ وَ مَنۡ لَّسۡتُمۡ لَهٗ بِرٰزِقِیۡنَ - আর আমি ওতে জীবিকার ব্যবস্থা করেছি তোমাদের জন্য, আর তোমরা যাদের রিজিকদাতা নও তাদের জন্যও। (১৫:২০) এই দুনিয়াতে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করার উপকরণ আল্লাহ আমাদের জন্য রেখেছেন যেন আমরা এগুলো উপভোগ করি এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হই। আর যত বেশি কৃতজ্ঞ হবেন তত বেশি আপনি নিজের জন্য আখিরাতের কল্যাণের দরজা উন্মুক্ত করছেন। কারণ, কৃতজ্ঞতার অনুভূতি আপনার মন নরম করে দিবে আর এটা আখিরাতের কল্যাণের জন্য রাস্তা তৈরী করে দিবে। -- নোমান আলী খান -- 06. 'Ali 'Imran - Ayah 16-18 Ramadan 2018 Time 19:43

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট