চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন


 চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন (রামাদান সিরিজ পর্ব ০৫)

------------------------------ কুরআন থেকে পাওয়া আজকের শিক্ষা হলো পাঁচটি শব্দ; এগুলো মুখস্ত করবেন। পাঁচটি সহজ শব্দ যা সিরাতে এবং কুরআনে বারবার এসেছে। কুরআন আমাদেরকে বলে যে, যখন রাসূল (স) গারে ছাওর (غَارِ ثَوْر) বা ছাওর গুহায় ছিলেন, তখন কুরাইশরা তাঁকে হত্যা করার জন্য লোক পাঠিয়েছিলো। আবু বকর (রা) সেখানে ছিলেন, আর আবু বকর রাসূল (স) কে বলেছিলেন, “ও আল্লাহর রাসূল, তারা যদি নিচে তাকায়, তাহলে আমাদেরকে দেখতে পাবে”। জবাবে রাসূল (স) পাঁচটি শব্দ বলেছিলেন। পাঁচটি শব্দ - لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا - লা তাহযান, ইন্নাল্লাহা মা’আনা। এই পাঁচটি শব্দ মুখস্ত করে রাখুন এবং বাকী জীবন এগুলো প্রয়োগ করতে থাকুন। এই পাঁচটি শব্দ মুখস্ত করুন- সিরাত থেকে, সুন্নাহ থেকে, কুরআন থেকে। لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا - লা তাহযান, ইন্নাল্লাহা মা’আনা; অর্থ - চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন। চিন্তা করবেন না, আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন। কেন আপনি আতঙ্কিত, কেন আপনি চিন্তিত। আমাদের আছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা। এর পরে যখন কোনো দুর্যোগ আঘাত করবে, ঋণ এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি যখন বৃদ্ধি পেতে থাকবে, যখন কোনো সম্পর্ক অথবা বন্ধুত্বে টানাপোড়েন সৃষ্টি হবে, যখন আপনি অফিসে পলিটিক্সের শিকার হবেন, যেকোনো ধরণের দুর্যোগ যখন আপনাকে আচ্ছন্ন করতে চাইবে, নিজেকে নিজে সান্ত্বনা দিবেন, لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا - লা তাহযান, ইন্নাল্লাহা মা’আনা - চিন্তা করো না, আল্লাহ আমার সাথে রয়েছেন। আপনার জীবনসঙ্গিকে বলুন, لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا - লা তাহযান, ইন্নাল্লাহা মা’আনা। আপনার বন্ধুকে বলুন, সহকর্মীকে বলুন, আপনার ভাইকে বলুন, উম্মাহকে বলুন, لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا - লা তাহযান, ইন্নাল্লাহা মা’আনা। আপনার চিন্তা কিসের, যখন আল্লাহ সাথে রয়েছেন ? সরল এই বাস্তবতাটি লক্ষ করুন। রাসূল (স) শুধু নিজেই চিন্তা-মুক্ত থাকেননি, তিনি শুধু নিজেই সম্পূর্ণরূপে প্রশান্তচিত্ত ছিলেন না, বরং তাঁর আত্মবিশ্বাস এতো বেশী পরিমাণে ছিলো যে, তিনি আবু বকর আস-সিদ্দীককেও সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। প্রশান্তচিত্ত এবং আত্মবিশ্বাসের এই নমুনা, যা এই সান্ত্বনা থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো, এটা কেবলমাত্র ইমান থেকেই উৎসারিত হওয়া সম্ভব। সুবহানাল্লাহ, রাসূল (স) এবং আবু বকরকে সাহায্য করার জন্য কোনো সেনাবাহিনী সেখানে ছিলো না; কোনো সুপারপাওয়ার তাঁর সাথে ছিলো না। গোটা পৃথিবী তাঁর পেছনে তাড়া করছিলো। কুরাইশরা তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছিলো। এই পৃথিবীর বুকে তাঁর কোনো সহায়তাকারী ছিলো না। কিন্তু তাঁর সাথে ছিলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা। আর আল্লাহর প্রতি সেই ইমান, আল্লাহর প্রতি ভরসা, ঐকান্তিকতা, বিশ্বাস, নিশ্চিন্ততা- এই সবকিছু কোন বাক্যে এসে একাকার হয়ে যায় ? “তোমার কিসের চিন্তা ? আল্লাহ তো আমাদের সাথে রয়েছেন”। চমৎকার এই আয়াতটি হলো সূরা তাওবার ৪০ নাম্বার আয়াত। আজ আমি আপনাদেরকে অন্য আরো পাঁচটি শব্দ প্রদান করবো। আরেকটি বাক্য, যা অন্য আরেকজন রাসূল উল্লেখ করেছিলেন। পাঁচটি শব্দে প্রথম বিষয়টি বর্ণনা করেছেন আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ (স)। সেটা ছিলো সূরা তাওবা আয়াত ৪০। একই ধারণা, কিন্তু কিছুটা ভিন্ন শব্দে বলেছেন আমাদের রাসূল মুসা (আ); তিনিও আমাদের রাসূল। আমাদের রাসূল মুসা (আ) বলেছেন- সূরা শু’আরা আয়াত ৬২। শু’আরা আয়াত ৬২, এখানেও পাঁচটি শব্দ। كَلَّا إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ - কাল্লা, ইন্না মা’য়িআ রব্বি সাইয়াহদিন। যখন ফেরাউন বনী ইসরাইলের পেছনে তাড়া করছিলো, আর তাদের সামনে ছিলো লোহিত সাগর। বনী ইসরাইলরা ছিলো সাধারণ মানুষ, তারা ছিলো কৃষক, তাদের অস্ত্রশস্ত্র ছিলো না, তাদের ঘোড়া ছিলো না, তাদের লোকবল ছিলো না। আর তাদেরকে তাড়া করছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম সাম্রাজ্য- প্রাচীন মিশরীয় সাম্রাজ্য। তাদের ছিলো পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। তাদের সামনে ছিলো সেই সমুদ্র, তাদের সামনে ছিলো কূল-কিনারাহীন পানির উত্তাল তরঙ্গ, আর তাদের পেছনে ছিলো সেনাবাহিনী। তখন মুসার উম্মতগণ বললেন, إِنَّا لَمُدْرَكُونَ - ইন্না লামুদরাকুন, অর্থাৎ আমরা ধরা পড়ে যাবো এবং গণহত্যার শিকার হবো। আমরা কিছুই করতে পারবো না। তারা আমাদের ধরে ফেলবে। কিন্তু মুসা (আ), তাঁর একদিকে ছিলো লোহিত সাগর আর পেছনে ছিলো ফেরাউন বাহিনী। তিনি বলেছিলেন, كَلَّا - কাল্লা, তেমনটা কখনোই হবে না। তারা আমাদেরকে ধরতে পারবে না। আমরাই টিকে থাকবো। কিভাবে আমি এটা জানলাম ? إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ - ইন্না মা’য়িআ রব্বি সাইয়াহদিন, অর্থাৎ আমার সাথে আমার প্রভু রয়েছেন, তিনি আমার জন্য একটা পথ বের করে দিবেন। ঠিক একই ধারণা, ঠিক একই ধরণের পরিস্থিতি। যখন গোটা পৃথিবী পরিত্যাগ করেছে, যখন কেউ সাহায্য করছিলো না, এই অবস্থাতে উভয় রাসূলই আল্লাহর উপর নির্ভর করেছিলেন, আর তাঁরা প্রদর্শন করেছিলেন তাঁদের ঐকান্তিকতা, ভরসা, তাঁরা দেখিয়েছিলেন আল্লাহর উপর নির্ভরতার শক্তি। কিভাবে আপনি চিন্তিত হতে পারেন যখন আল্লাহ রয়েছেন আপনার পক্ষে। কি আসে যায় যদি অপর পক্ষে ফেরাউনই থাকে। কি আসে যায় যদি এই পৃথিবীতে আপনার মিত্র পক্ষ কেউ না থাকে। যদি আল্লাহ আপনাকে সহায়তা করেন, কেউ আপনাকে পরাজিত করতে পারবে না। আল্লাহ যদি মিত্র পক্ষ হন, তাহলে শত্রু পক্ষে কে আছে তাতে কিছু আসে যায় না। আল্লাহ আপনার দায়িত্ব নিয়ে নিবেন। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআনে বলেছেন, إِنَّ اللَّهَ يُدَافِعُ عَنِ الَّذِينَ آمَنُوا - ইন্নাল্লাহা ইয়ুদাফি’উ ‘আনিল্লাযিনা আমানু, অর্থাৎ আল্লাহ ইমানদারদেরকে সকল প্রতিপক্ষ থেকে রক্ষা করবেন। তো এই দুটি আয়াত প্রদর্শন করে আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা এবং ইমানের নমুনা, আর আয়াতগুলো আমাদের জীবনে প্রশান্তির একটা অনুভূতি নিয়ে আসে। এখন প্রশ্ন আসে যে, কিভাবে আমরা সেরকম ইমানের স্তরে পৌঁছুবো। আর প্রসঙ্গক্রমে, সন্দেহাতীতভাবেই আমরা রাসূল (স) এর সমান স্তরে পৌঁছোনোর কথা চিন্তাও করতে পারি না। কিন্তু প্রিয় ভাইয়েরা, আপনারাতো তাঁরই অনুসারী; তাই না ? আপনারা তাঁরই অনুসারী। তো তিনি যা করেছেন, আপনাদেরও তা করা উচিৎ। তিনি আদর্শ স্থাপন করেছেন, তিনি পথ দেখিয়েছেন, আপনাদের উচিৎ তা অনুসরণ করা। আর তাই তিনি আমাদের দেখিয়েছেন যে, যদি আপনি ছাওর গুহায়ও থাকেন, যখন গোটা পৃথিবী আপনার বিপক্ষে যায়, যখন আপনি আক্ষরিকভাবেই একটি গুহার ভিতরে একা থাকেন, এমনকি তখনও আপনার উচু স্তরের আত্মবিশ্বাস, সেইরকম আত্ম-মর্যাদা থাকতে পারে। আল্লাহর প্রতি ইমানের সর্বোচ্চ সেই স্তরে হয়তো আপনি এবং আমি পৌঁছুতে পারবো না। কিন্তু আংশিকভাবে হলেও সেই স্তরে পৌঁছুনোর চেষ্টা আমাদের করা উচিৎ। আমাদের চেষ্টা করা উচিৎ যত সামান্যই হোক, এক দুই পার্সেন্ট হলেও আমাদের চেষ্টা করা উচিৎ সেই স্তরের কাছাকাছি যাবার। তো কিভাবে আমরা এটা করবো, কিভাবে আমরা উঁচু স্তরে পৌঁছুবো। তার কয়েকটি পন্থা রয়েছে। প্রথমত, আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী অধ্যয়ন করা। এটা জানা যে, আল্লাহ হলেন আল-ক্বওয়ী, আল-’আযীয, আস-সামী’, আল-জাব্বার, আল-মুতাকাব্বির (اَلْقَوِي ، اَلْعَزِيْز ، اَلسَّمِيْع ، اَلْجَبَّار ، اَلْمُتَكَبِّر)। আল্লাহ সম্পর্কে জানা এবং তাঁর নামসমূহ, তাঁর আসমা (أَسْمَاء) এবং তাঁর সিফাতগুলোর জ্ঞান - আল্লাহর প্রতি কাঙ্ক্ষিত মানের আত্মবিশ্বাস এবং মাহাব্বাহ তৈরী করবে। তো আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে অধ্যয়ন করা হলো আল্লাহর সাথে সেই স্তরের সম্পর্ক উন্নয়নের পন্থাগুলোর অন্যতম। দ্বিতীয়ত, স্বাচ্ছন্দ্যের সময় আল্লাহর ইবাদাত করা। আমি আবারও বলছি, স্বাচ্ছন্দ্যের সময় আল্লাহর ইবাদাত করা। আল্লাহ সম্পর্কে জানা, যখন অবস্থা ভালো থাকে। এর ফলে, যখন অবস্থা খারাপ হবে, তখন ইতোমধ্যেই আল্লাহ সম্পর্কে আপনার জানা থাকবে। আর এটাই আমাদের রাসূল (স) বলেছেন - تَعَرَّفْ إلَى اللَّهِ فِي الرَّخَاءِ يَعْرِفُك فِي الشِّدَّةِ - তা’আররাফ ইলাল্লাহি ফিররাখা, ইয়া’রিফুকা ফিশ শিদ্দাহ, অর্থাৎ সহজ অবস্থায় আল্লাহ সম্পর্কে জানো, তাহলে কঠিন অবস্থায় আল্লাহ তোমাকে স্মরণে রাখবেন। تَعَرَّفْ إلَى اللَّهِ فِي الرَّخَاءِ يَعْرِفُك فِي الشِّدَّةِ - তা’আররাফ ইলাল্লাহি ফিররাখা, ইয়া’রিফুকা ফিশ শিদ্দাহ। আল্লাহ সম্পর্কে জানুন যখন অবস্থা ভালো থাকে। প্রিয় ভাইয়েরা, ধার্মিক হওয়ার জন্য এটা সহজতম অনুপ্রেরণাগুলোর একটি। এমনটা না যে আমাদের আর কোনো অনুপ্রেরণার প্রয়োজন নেই, কিন্তু এটাও প্রয়োজনীয়, এটা একটা আশির্বাদ। আমাদের সবারই আল্লাহকে প্রয়োজন - দিন-রাত্রির সকল সময়। কিন্তু কখনো কখনো আমরা মনে করি যে তাঁকে আমাদের অন্য সময়ের চেয়েও বেশী প্রয়োজন। বাস্তবিকভাবে, আমাদের তাঁকে সবসময় সমানভাবে প্রয়োজন। কিন্তু আমরা মনে করি যে, যখন অবস্থা কঠিন হয়ে যায়, যখন দুর্যোগ এসে পড়ে, যখন দুর্দশা দেখা দেয়, আকস্মিকভাবে আমরা মনে করি যে আল্লাহকে আমাদের আরো বেশি প্রয়োজন। বাস্তবিকভাবে, আমাদের সবসময়ই তাঁকে প্রয়োজন। কিন্তু ব্যাপারটা হলো, আমাদের রাসূল (স) আমাদেরকে শিখিয়েছেন, তুমি যদি চাও যে আল্লাহ তোমাকে সাওর গুহাতে সাহায্য করবেন, তুমি যদি চাও যে তিনি তোমাকে সাহায্য করবেন যখন একদিকে থাকবে ফেরাউন আর অন্যদিকে লোহিত সাগর, সেক্ষেত্রে সারা বছর ধরে আল্লাহর সাথে তোমার সম্পর্কটি কি ধারাবাহিক ছিলো ? আল্লাহর সাহায্য তখন আসবে, যেদিন কায়মনবাক্যে ডাকার সময় আল্লাহকে পুণরায় আবিষ্কার করতে হবে না, নতুনকরে সেই সম্পর্ক আর তৈরী করতে হবে না। আপনার ‘ইবাদাতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন, আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ক্ষত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন। আর যখন আপনি সেই ধারাবাহিকতা অর্জন করতে পারবেন, তখন পৃথিবীও যদি হারিয়ে ফেলেন, আপনার হৃদয় তখনো অপরিবর্তিত থাকবে। আপনার হৃদয় তখনো অপরিবর্তিত থাকবে। আর তাই, ধার্মিকতা হলো ইমানের উঁচু স্তরে পৌঁছার একটি পন্থা। এটা দ্বিতীয় পন্থা। ইমানের উঁচু স্তরে পৌঁছানোর তৃতীয় পন্থাটি হলো, যখন আপনি কোনো কিছু করেন, সেটা যথাযথভাবে করুন। সেটা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করুন, উপযু্ক্ত মানুষের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে সেটা করুন, ইসতিখারার নামাজ পড়ার পর সেটা করুন। যখন কোনোকিছু যথাযথভাবে করেন, এরপর যখন সংকট বা সমস্যায় পড়েন, তখন বলতে পারবেন যে, “আমি এটা সঠিক নিয়তে করেছিলাম। আমি এটা যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে করেছিলাম, আর আমি জানি আল্লাহ আমার সাথে রয়েছেন”। তো কোনোকিছু কিভাবে যথাযথভাবে করা যায় - এটা ভিন্ন আরেকটি আলোচনা। তবে সংক্ষেপে বলতে গেলে, এটা নিশ্চিত করবেন যে কাজটা আল্লাহর জন্য করছেন, আরো নিশ্চিত করবেন যে আপনি সঠিক মানুষের পরামর্শ নিচ্ছেন, এটাকে বলা হয় ইসতিশারা, আরো নিশ্চিত করবেন যে আপনি ইসতিখারার নামাজ পড়ছেন। তিনটি সহজ বিষয় - ইখলাস, ইসতিখারা, ইসতিশারা। আপনি বড় ধরণের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এরপর আপনি সংকটের মুখোমুখি হলেন, তখন আপনি বলতে পারবেন, “আমি এটা করেছি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, আল্লাহ আমাকে পরিত্যাগ করবেন না। আমি এটা করেছি সঠিক নিয়তে। আল্লাহ এই প্রচেষ্টাকে বরকতময় করে দিবেন”। আপনি যদি সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন, এরপর যদি সংকট দেখা দেয়, আপনি আল্লাহর মুখাপেক্ষি হয়ে বলতে পারবেন যে, “হে আল্লাহ, আপনি জানেন, আমি এ অবস্থায় রয়েছি, আর আমি আপনার উপরই ভরসা করেছি। যেহেতু আপনার উপরই ভরসা করেছি, আপনিই আমাকে এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করুন”।
সময় স্বল্প; সর্বশেষ পন্থাটি হলো - আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে দোয়া করা। আল্লাহর প্রতি সত্যিকারের নির্ভরতা প্রদর্শনের উপায়গুলোর একটি হচ্ছে দোয়া। আমাদের প্রয়োজনের সময় আল্লাহকে ডাকা। এটা হলো সবচেয়ে শক্তিশালী উপায়গুলোর একটি যার দ্বারা আমরা প্রদর্শন করতে পারি যে, আল্লাহ হলেন আল-ক্বওয়ি (اَلْقَوِي), আল্লাহ হলেন আস-সামী’ (اَلسَّمِيْع), আল্লাহ হলেন আল-বাছীর (اَلْبَصِيْر), আল্লাহ হলেন আল-হাই (اَلْحَيْ)। দোয়া করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ইমান প্রদর্শন করি, “ও আল্লাহ, আমি জানি আপনি আছেন, আমি জানি আপনি শুনছেন, আমি জানি আপনি অবশ্যই জবাব দিবেন, আমি জানি আপনার জবাব দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে”। আর এই সবগুলো পন্থার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রতি আমাদের নির্ভরতা এবং ইমান প্রদর্শন করতে পারি।
উপসংহারে, كَلَّا إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ - কাল্লা, ইন্না মা’য়িআ রব্বি সাইয়াহদিন। না, আমি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যাবো না, আমার প্রভু বিপদ থেকে উত্তরণের একটা ব্যবস্থা করবেন। আর আমাদের রাসূল (স) বলেছেন, لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا - লা তাহযান, ইন্নাল্লাহা মা’আনা। মূলত এমন সবকিছু যা আপনার তাক্বওয়া বৃদ্ধি করে, সেগুলো আপনার আত্ববিশ্বাসের স্তরকেও বৃদ্ধি করবে। এমন সবকিছু যা আপনার সাথে আল্লাহর সম্পর্ককে মজবুত করে, সেগুলো আপনার আত্মবিশ্বাসকেও দৃঢ় করবে হতাশা এবং দুর্যোগের মুহূর্তে। যখন পৃথিবী বিশৃঙ্খল হয়ে উঠবে, তখনো আপনি শান্তি, স্থিরতা, মর্যাদা এবং নির্ভরতার অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে জ্বলে উঠবেন। “যা কিছুই ঘটে যায়, তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই ঘটে, আর আমি আল্লাহর উপরই ভরসা করি”। لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا - লা তাহযান, ইন্নাল্লাহা মা’আনা, لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا - লা তাহযান, ইন্নাল্লাহা মা’আনা, لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا - লা তাহযান, ইন্নাল্লাহা মা’আনা। আমরা আগামীকালও এই আলোচনা চালিয়ে যাবো ইনশা আল্লাহু তা’আলা। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। -- শায়েখ ইয়াসির কাদি

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট