আল্লাহর কাছে বুদ্ধিমান হতে চান?

 


আপনার বন্ধুরা যদি আপনাকে বুদ্ধিমান বলে খুব ভাল লাগে তখন, তাই না? আরও ভালো লাগে যখন আপনার শিক্ষকেরাও আপনার সম্পর্কে বলে-- "আরে ও তো খুবই বুদ্ধিমান ছেলে বা ও তো খুবই বুদ্ধিমতী মেয়ে।" এমনকি বাবা মা বা পরিবারের লোকজনও যদি মনে করে যে, আমাদের পরিবারে অমুক সবচেয়ে বুদ্ধিমান। তখন ব্যাপারটা আপনার মনে এক ধরনের তৃপ্তি এনে দেয়। আল্লাহ আমাদের অহংকার থেকে রক্ষা করুন।

এখন, ভেবে দেখুন তো? যদি বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সির সৃষ্টিকর্তা, সাত আসমানের প্রভু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আপনাকে বুদ্ধিমান বলেন তখন অনুভূতিটা কেমন হবে? কল্পনা করা যায়? কুরআনে আল্লাহ কাদেরকে বুদ্ধিমান বলেছেন জানেন? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন- اِنَّ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافِ الَّیۡلِ وَ النَّهَارِ لَاٰیٰتٍ لِّاُولِی الۡاَلۡبَابِ - নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্য বহু নিদর্শন আছে। الَّذِیۡنَ یَذۡکُرُوۡنَ اللّٰهَ قِیٰمًا وَّ قُعُوۡدًا وَّ عَلٰی جُنُوۡبِهِمۡ وَ یَتَفَکَّرُوۡنَ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هٰذَا بَاطِلًا ۚ سُبۡحٰنَکَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ -- "যারা আল্লাহকে দন্ডায়মান, উপবিষ্ট এবং শায়িত অবস্থায় স্মরণ করে থাকে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টির ব্যাপারে চিন্তা করে (ও বলে) : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি, তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সুতরাং আমাদেরকে অগ্নির শাস্তি হতে রক্ষা কর।" (৩:১৯০-১৯১) যারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করে তাদেরকে তিনি বুদ্ধিমান বলেছেন। তাই, আল্লাহর কাছে বুদ্ধিমান হতে চান? সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করুন। আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেন-- یٰۤاَیُّهَاالَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اذۡکُرُوا اللّٰهَ ذِکۡرًا کَثِیۡرًا - "হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর।" وَّ سَبِّحُوۡهُ بُکۡرَۃً وَّ اَصِیۡلًا - "আর সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।" (আহযাব ৪১, ৪২) তাই, বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করুন। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার।

সূরা মুতাফফিনিনে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলেন- "ইন্নাল আবরারা লাফিই নাঈম- পুণ্যবান লোকেরা থাকবে অফুরন্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের মাঝে।" عَلَی الۡاَرَآئِکِ یَنۡظُرُوۡنَ - "সুসজ্জিত আসনে বসে তারা দেখতে থাকবে।" অর্থাৎ, বিলাসবহুল চেয়ারে বা সিংহাসনে। আর তারা আরাম করে বসে থাকবে। রিল্যাক্স করবে। পাশ্চাত্য সমাজে যেমন বলা হয় 'লেজি বয় চেয়ার' বা অলস ছেলের চেয়ার। যে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে মানুষ রিল্যাক্স করে, চা কফি পান করে বা বই পড়ে। টিভি দেখে বা আড্ডা দেয়, যাই করুক। এটা হলো আরাম আয়েশের একেবারে খাঁটি আচরণ। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলছেন যারা এই দুনিয়াতে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতো পরের জীবনে তারা "আলাল আরা-ইকি ইয়ানজুরুন-সুসজ্জিত আসনে আয়েস করে বসে দেখতে থাকবে।" এরপর তিনি বলেন- تَعۡرِفُ فِیۡ وُجُوۡهِهِمۡ نَضۡرَۃَ النَّعِیۡمِ- "তুমি তাদের মুখে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের উজ্জ্বলতা দেখতে পাবে।" এই দুনিয়াতেও কেউ যদি ভালো খাবার আহার করে, মজার আলাপ-আলোচনা করে তাদের চোখ মুখ থেকেও কেমন যেন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ে। সবকিছু ভালো যাচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ। আর জান্নাতে এই সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে। یُسۡقَوۡنَ مِنۡ رَّحِیۡقٍ مَّخۡتُوۡمٍ - "তাদেরকে পান করানো হবে সীল-আঁটা উৎকৃষ্ট পানীয়।" এই পানীয় তাদের সরবরাহ করা হবে। আপনাকে উঠে গিয়ে নিয়ে আসতে হবে না। জান্নাতে আমাদের সেবা করার জন্য সেবক থাকবে। আল্লাহর বিশেষ এক সৃষ্টি। তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে না। আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতী মানুষদের সেবক হওয়ার জন্য সৃষ্টি করেছেন। এটা তাদের কাজ। আর এতে তারা সন্তুষ্ট। আমি আগেও অনেকবার বলেছি, জান্নাতের কি এক বিস্ময়কর নেয়ামত এটি! আপনি একবার খাবেন এরপর আবার খাবেন, আবার খাবেন, আবার খাবেন শুধু খেতেই থাকবেন। এতে আপনার পেট যেমন পূর্ণ হয়ে যাবে না আবার ফুলেও উঠবে না। জান্নাতে মোটা হয়ে যাওয়ার কোনো ভয় নেই। কোনো ধরণের অনুশোচনা ছাড়াই আপনি খেতে পারবেন। বাঁচতে হবে বলে খাবেন না, খাবেন শুধু খাবারের স্বাদ উপভোগ করার জন্য। মজা পাওয়ার জন্য। কখনোই এমন হবে না, আমার পেট পূর্ণ হয়ে গেছে আর আহার করা সম্ভব নয়। আপনি মজার মজার সব খাবার আহার করবেন, করতেই থাকবেন। এটি জান্নাতের অন্যতম বড় একটি নিয়ামত। তো আল্লাহ বলেন-یُسۡقَوۡنَ مِنۡ رَّحِیۡقٍ مَّخۡتُوۡمٍ - "তাদেরকে পান করানো হবে সীল-আঁটা উৎকৃষ্ট পানীয়।" সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কোয়ালিটির মদ তাদের পান করানো হবে। এখানে 'রাহিক' মানে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কোয়ালিটির মদ। মদ সম্পর্কে আমি আসলে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। আমি জানি না কোন ধরণের পরিভাষা ব্যবহার করতে হবে। আর এরজন্য আল্লাহর প্রশংসা করছি। আমি দুআ করছি, আমরা যারা দুনিয়ার মদ পান থেকে নিজেদের বিরত রেখেছি, এর বিনিময়ে আল্লাহ যেন আমাদেরকে আখিরাতের মদের স্বাদ আস্বাদন করার তৌফিক দান করেন। خِتٰمُهٗ مِسۡکٌ - "এর শেষ ফোঁটা কস্তুরীর মতো সুগন্ধযুক্ত হবে।" অর্থাৎ, পানীয়টি আপনি পান করা শুরু করলেন, যত পান করতে থাকবেন এর স্বাদ তত বাড়তে থাকবে। আর যখন শেষ ফোঁটা পান করবেন এটা হবে পুরা ড্রিঙ্কসটার সবচেয় সুস্বাদু অংশ। وَ فِیۡ ذٰلِکَ فَلۡیَتَنَافَسِ الۡمُتَنَافِسُوۡنَ - "প্রতিযোগিতাকারীদের তো উচিৎ এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা।" এই আকাঙ্ক্ষার জন্য, এই মজার জন্য, এই পুরস্কারের জন্য, এই আমোদপ্রমোদের জন্য, এই অমৃত স্বাদের জন্য, এই ককটেইলের জন্য...আল্লাহ বলছেন এটার জন্যই তোমাদের প্রতিযোগিতা করা উচিত। হে ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ার মানুষেরা! তোমার প্রাসাদ আর ম্যানসনের পরোয়া করে কে। কয়েক দশকের মধ্যেই যা হারিয়ে যাবে। এই দুনিয়ার সকল আমোদপ্রমোদের কিইবা মূল্য আছে যার সবকিছুই ক্ষণিকের। আল্লাহ বলেছেন তুমি আসলেই কিছু করতে চাও? তাহলে পরবর্তী জীবনকে নিজের লক্ষ্য বানাও। জান্নাতকে নিজের লক্ষ্য বানাও। ঐ পানীয়টাকে নিজের লক্ষ্য বানাও। ঐ ড্রিংসের এক ফোঁটাও এ দুনিয়ার সকল ড্রিংকসের চেয়ে উত্তম। প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করতে তোমার ভালো লাগে? তাহলে ঐ ড্রিংকসের জন্য প্রতিযোগিতা করো। - ড. ইয়াসির কাদি - The Descriptions of Jannah - Episode 7 [এই সূরার প্রথম দিকে বলা হয়েছে- "মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে। আর যখন তাদেরকে মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়।" এই ড্রিংকস পাওয়ার জন্য আমরা একটা কাজ করতে পারি। মানুষকে ঠকানো বন্ধ করতে পারি।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট