যারা জানে আর যারা জানেনা তারা কি সমান?

 


রামাদান সিরিজ পর্ব ০৬

যারা জানে আর যারা জানেনা তারা কি সমান? ------------------------ কুরআন থেকে পাওয়া আজকের শিক্ষাটি হলো সূরা যুমারের ৯ নাম্বার আয়াত - قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ والَّذِينَ لا يَعْلَمُونَ - ক্বুল হাল ইয়াসতাওইল্লাযিনা ইয়ালামুনা ওয়াল্লাযিনা লা ইয়ালামুন, অর্থাৎ তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, যাদের জ্ঞান আছে আর যাদের জ্ঞান নেই তারা কি সমান ? তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ والَّذِينَ لا يَعْلَمُونَ - হাল ইয়াসতাওইল্লাযিনা ইয়ালামুনা ওয়াল্লাযিনা লা ইয়ালামুন ? তারা কি সমান - যাদের জ্ঞান আছে এবং যাদের জ্ঞান নেই ? এই প্রশ্নের মাধ্যমে আল্লাহ শিক্ষা গ্রহণ এবং জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব বর্ণনা করছেন। আপনি কি মনে করেন এই দুটি সমান ? প্রশ্নটি করা হয়েছে বক্তব্য উপস্থাপনের উদ্দেশ্যে। আপনি কি এই দুই শ্রেণীর মানুষকে সমান বলে বিবেচিত করবেন ? যাদের জ্ঞান আছে আর বিপরীতে যাদের জ্ঞান নেই ? গোটা কুরআনই জ্ঞান ছাড়া অন্য কিছুই না। কুরআন জ্ঞানের প্রশংসা করেছে এবং জ্ঞানকে কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করেছে। কুরআন নাযিল হয়েছিলো আমাদেরকে জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার জন্য। জ্ঞানের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে কেনো আমরা পৃথিবীতে এসেছি। আমরা জানতে পেরেছি কে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহ মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ আমাদের বলেছেন যে, সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ যা তিনি আমাদের প্রদান করেছেন, তা হলো কোনো কিছু শেখার সক্ষমতা এবং সেই জ্ঞানও যা তিনি আমাদের দিয়েছেন। وَاللهُ أَخْرَجَكُم مِن بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لاَ تَعْلَمُونَ شَيْئًا - ওয়াল্লাহু আখরাজাকুম মিম বুতুনি উম্মাহাতিকুম লা তা’লামুনা শাইআ, অর্থাৎ "আল্লাহ তোমাদেরকে বের করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে এমতাবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না।" লক্ষ করুন, যখন আপনি জন্মগ্রহণ করেছেন কতটুকু জ্ঞান আপনার ছিলো? আপনি কিছুই জানতেন না। তারপর আল্লাহ বলেছেন, আমি তোমাকে দিয়েছি - السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ - আস-সাম’আ ওয়াল-আবছারা ওয়াল আফইদাহ। আমি তোমাকে দিয়েছি শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং চিন্তাশক্তি। আমি তোমাকে জ্ঞান অর্জনের সামর্থ দান করেছি। আয়াতটি লক্ষ করুন। আল্লাহ বলেছেন, তুমি এসেছিলে যখন কোনো কিছু জানতেন না। তুমি মাতৃগর্ভ থেকে বের হয়ে এসেছিলে সম্পূর্ণ অজ্ঞ অবস্থায় - لاَ تَعْلَمُونَ شَيْئًا - লা তা’লামুনা শাইআ। কিন্তু আমি তোমাকে শেখার সামর্থ দান করেছি। আমি তোমাকে দিয়েছি কান, চোখ এবং চিন্তাশক্তি যাতে তুমি বেড়ে উঠতে এবং শিখতে পারো। আল্লাহ প্রদর্শন করেছেন যে, জ্ঞানের মাধ্যমেই চূড়ান্ত শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশিত হয়। আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেছিলেন যে, আমি একটি নতুন সৃষ্টি তৈরী করতে চাই। তিনি ফেরেশতাদের বলেছিলেন এই সৃষ্টির কাছে অবনত হওয়ার জন্য। কিভাবে আল্লাহ প্রদর্শন করেছিলেন যে, এই সৃষ্টিটি ফেরেশতাদের থেকেও শ্রেষ্ঠ? এই সৃষ্টিটি কি আকৃতিতে ফেরেশতাদের চেয়ে বড় ছিলো ? এই সৃষ্টিটির কি ফেরেশতাদের চেয়ে বেশি পাখা ছিলো ? কিভাবে আল্লাহ ফেরেশতাদের তুলণায় মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করেছিলেন ? وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا - ওয়া ‘আল্লামা আদামাল আসমাআ কুল্লাহা। আল্লাহ আদমকে একটি ‘ইলম দিয়েছিলেন যা তিনি ফেরেশতাদের প্রদান করেননি। আল্লাহ আদমকে একটি জ্ঞান দিয়েছিলেন যা ফেরেশতাদের দেয়া হয়নি। এই জ্ঞানের কারণেই ফেরেশতাগণ উপলব্ধি করেছিলেন যে, আল্লাহ আমাদের উপর আদমকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। জ্ঞানের দ্বারাই স্বয়ং রাসূলদের মর্যাদাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আল্লাহ কুরআনে রাসূল (স) কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا - ওয়া ‘আল্লামাকা মা লাম তাকুন তা’লাম, ওয়াকানা ফাদলুল্লাহি ‘আলাইকা ‘আযীমা, অর্থাৎ ইয়া রসূলাল্লাহ, আল্লাহ আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না। وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا - ওয়া ‘আল্লামাকা মা লাম তাকুন তা’লাম, ওয়াকানা ফাদলুল্লাহি ‘আলাইকা ‘আযীমা- আর আপনার উপর রয়েছে আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহ। জ্ঞানের মাধ্যমে এমনকি পৃথিবীর নেতৃত্বও প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধুমাত্র ধর্মীয় নেতৃত্বই না, শুধুমাত্র ধর্মগুরু এবং ‘আলেমগণই না বরং পার্থিব নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও। অন্যদেরকে নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার সবচেয়ে বেশী কার রয়েছে ? কুরআন থেকে আমরা জানতে পারি যখন আল্লাহ বনী ইসরাইলের জন্য একজন রাজা নিযুক্ত করেছিলেন, যখন আল্লাহ তালুতকে বাছাই করেছিলেন বনী ইসরাইল বলেছিলো, “এই ব্যক্তি, যাকে আপনি নিযুক্ত করেছেন, সে কোনো রাজপরিবারের সদস্য নয়, সে অভিজাত শ্রেণীর সদস্য নয়, তার অর্থ-সম্পদ নেই, সে আমাদের মাঝে উচ্চমর্যাদার কেউ নয়”। আর সেই সময়কার রাসূল তাদেরকে বললেন, তোমরা কি দেখছো না যে, আল্লাহ তালুতকে বাছাই করেছেন? وَزَادَهُ بَسْطَةً فِي الْعِلْمِ وَالْجِسْمِ - ওয়া যাদাহু বাসতাতান ফিল ‘ইলমি ওয়াল জিসম। অর্থাৎ আল্লাহ তালুতকে ‘ইলম এবং শারিরীক শক্তি দিয়েছিলেন। আল্লাহ তালুতকে জ্ঞান দিয়েছিলেন, সেই জ্ঞান তাকে রাজা হওয়ার যোগ্য বানিয়েছিলো। তো এই পৃথিবীর নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও এটা সত্য। সবচেয়ে সফল সি.ই.ও কে ? যে সবচেয়ে বেশি জানে। তো আমরা বুঝতে পারি যে, দ্বীন এবং দুনিয়ার জন্য জ্ঞান হলো একটি অগ্রগণ্য বিষয়। আসুন সর্বপ্রথম ওহীর দিকে দৃষ্টিপাত করি। সেই ওহীতে আল্লাহ কোন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছেন ? এটা হলো জ্ঞান, জ্ঞান অর্জন এবং জ্ঞানের অধ্যয়ন। اِقْرَأْ - ইকরা। আর্থাৎ পড়ো, জ্ঞান অর্জন করো এবং শিখো। اِقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ - ইকরা ওয়ারব্বুকাল আকরাম, الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ - আল্লাযি ‘আল্লামা বিলক্বলাম, عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ - ‌’আল্লামাল ইনসানা মা লাম ইয়া’লাম, অর্থাৎ আল্লাহ মানুষকে শিখিয়েছেন যা মানুষ জানতো না। এটাই আল্লাহ আমাদের বলছেন; মানুষের জ্ঞান অর্জনের সক্ষমতা রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে, কোনো পশুর এই ধরণের সক্ষমতা নেই। আমাদের রয়েছে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জ্ঞান অর্জনের সক্ষমতা এবং জ্ঞানগত আত্ম-উপলব্ধি যা কোনো পশুর মধ্যে নেই। হ্যাঁ এটা সত্য যে, পশুরা একমাত্রিকভাবে শিখতে পারে। তারা খুবই প্রাথমিক কিছু বিষয় শিখতে পারে। কিন্তু গভীর চিন্তা করা, জ্ঞানগর্ভ চিন্তার অধিকারী হওয়া, দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবা, ইতিহাস অধ্যয়ন করা, জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করা, জ্ঞানগুলোকে একীভূত করা, জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা- এগুলো এমন পর্যায়ের চিন্তাবৃত্তি যা অন্য কোনো সৃষ্টির মাঝে নেই। তো আল্লাহ যে শুধু আমাদেরকে জ্ঞান অর্জনের সক্ষমতার কারণে বাছাই করেছেন তা-ই না, বরং আল্লাহ সেই জ্ঞানও আমাদের দান করেছেন। وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ - ওয়া ‘আল্লামাকা মা লাম তাকুন তা’লাম। তিনি আমাদেরকে সক্ষমতা দান করেছেন আর তারপর তিনি আমাদেরকে জ্ঞানও দান করেছেন। পশুকে প্রশিক্ষিত করার মতো পার্থিব বিষয়ের উল্লেখও কুরআনে এসেছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কুরআনে পশুর প্রশিক্ষণের উল্লেখ রয়েছে। আর যখন আপনার প্রশিক্ষিত পশু শিকার করে, যখন আপনার প্রশিক্ষিত কুকুর শিকার করে, সেই সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, تُعَلِّمُونَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَكُمُ اللَّهُ - তু’আল্লিমুনাহুন্না মিম্মা ‘আল্লামাকুমুল্লাহ। আপনি যে আপনার কুকুরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন- এটা কিন্তু কুরআনে একটি আয়াত। শিকার করার জন্য কুকুরের সেই প্রশিক্ষণ, সেই প্রশিক্ষণের সক্ষমতা আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন। تُعَلِّمُونَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَكُمُ اللَّهُ - তু’আল্লিমুনাহুন্না মিম্মা ‘আল্লামাকুমুল্লাহ - কুরআনেই এটা রয়েছে। এমনকি পশুদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়ার মতো এরকম একটা পার্থিব জ্ঞানও আল্লাহপ্রদত্ত। আপনি কিভাবে জেনেছেন যে, কিভাবে পশুদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে ? কিভাবে আপনি এই দক্ষতাটি অর্জন করেছেন ? জাহাজ নির্মাণ করার ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, আমি নুহকে এটা শিখিয়েছি। ভাষার ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, আমি আদমকে ভাষা শিখিয়েছি। ধাতুবিদ্যার প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন, وَعَلَّمْنَاهُ صَنْعَةَ لَبُوسٍ - ওয়া ‘আল্লামনাহু ছন’আতা লাবুসিন, অর্থাৎ আমি দাউদকে ধাতুবিদ্যা শিখিয়েছি। এই সকল বিজ্ঞানের প্রাথমিক জ্ঞান আল্লাহ মানুষকে শিখিয়ে দিয়েছেন। এরপর আমরা সেখান থেকে উন্নতি সাধন করেছি। এই সবকিছুই আল্লাহ আমাদেরকে আশির্বাদ হিসেবে দান করেছেন। তো, কুরআন জ্ঞানের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। আর কুরআন প্রত্যাশা করে যে আমরা জ্ঞান অর্জন করি। প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণ কুরআনে রাসূল (স)-কে শুধু একটি জিনিস তাঁর যতটুকু রয়েছে তার চেয়েও বেশি পরিমাণে চাওয়ার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে - قُلْ رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا - ক্বুল রব্বি যিদনি ‘ইলমা, অর্থাৎ ও আল্লাহ আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন। قُلْ رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا - ক্বুল রব্বি যিদনি ‘ইলমা। তো আমরা শিখলাম, هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ والَّذِينَ لا يَعْلَمُونَ - হাল ইয়াসতাওইল্লাযিনা ই’য়ালামুনা ওয়াল্লাযিনা লা ইয়ালামুন ? - আপনি কি মনে করেন যে যার জ্ঞান আছে আর যার জ্ঞান নেই তারা উভয়ে সমান ? না, আল্লাহর শপথ, তারা সমান নয়। তো আমরা আরো শিখলাম যে, একজন মুসলিম জ্ঞান দ্বারা আচ্ছন্ন থাকবে। সকল ধরণের জ্ঞান- দ্বীনের জ্ঞান এবং দুনিয়ার জ্ঞান। একজন মুসলিম সবসময় শিখতে চায়, সে সবসময় কৌতুহলী, সে সবসময় পড়তে চায়। اِقْرَأْ - ইকরা - হলো প্রথম ওহী। একসময় আমরা পৃথিবী শাসন করেছিলাম কারণ তখন আমরা জ্ঞানের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত এখন অবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের চিন্তাশক্তিতো এখনো রয়েছে। তাই সকলের প্রতি আমার অনুরোধ হলো, এই আয়াতটি মুখস্ত করুন। هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ والَّذِينَ لا يَعْلَمُونَ - হাল ইয়াসতাওইল্লাযিনা ইয়ালামুনা ওয়াল্লাযিনা লা ইয়ালামুন ? - যার জ্ঞান আছে আর যার জ্ঞান নেই, তারা উভয়ে কি সমান ? আর উপলব্ধি করুন, কোনো বিষয়ে আপনি যত বড় বিশেষজ্ঞই হোন না কেনো, সবসময়ই আপনার অন্য বিষয়েও জ্ঞান অর্জনের সুযোগ রয়েছে। وَفَوْقَ كُلِّ ذِي عِلْمٍ عَلِيمٌ - ওয়া ফাওক্বা কুল্লি যি ‘ইলমিন ‘আলীম, অর্থাৎ সকল বিশেষজ্ঞের উপরও বিশেষজ্ঞ রয়েছে। আপনি সকল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে পারবেন না। প্রকৃতপক্ষে, সূরা কাহাফে মুসা এবং খিজিরের ঘটনাটিতে একজন রাসূল হওয়া সত্ত্বেও মুসাকে আল্লাহ বলেছিলেন, “তোমার এমন জ্ঞান রয়েছে যা অন্য কারো নেই, কিন্তু খিজিরের আবার এমন জ্ঞান রয়েছে যা তোমার কাছেও নেই”। তো মুসা (আ) খিজিরের কাছে গিয়েছিলেন, আর মুসা বলেছিলেন, “আল্লাহ আপনাকে যা শিখিয়েছেন, তা আমি শিখতে চাই”। এটা প্রকাশ করছে যে, কোনো কিছু শিখতে হলে আপনাকে বিনয়াবনত হতে হবে। আর আপনাকে চারপাশের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানতে ইচ্ছুক হতে হবে। মুসা একজন নবী ছিলেন কিন্তু অন্য এমন কেউ থাকতে পারে যে তাঁর চেয়েও বেশী জ্ঞানী। কুরআন আমাদেরকে এটাই শিক্ষা দিচ্ছে। মুসার ক্ষেত্রে যদি এমনটা ঘটে থাকে, আমার এবং আপনার অবস্থা কি ? নিজেকে বিনয়াবনত করুন এবং শিখুন। আমি সর্বদা নিজেকে এবং আমার ছাত্রদেরকে স্মরণ করিয়ে দেই যে, আপনাকে একজন আলেম হতে হবে না, কিন্তু মূর্খ থাকাও চলবে না। আপনাকে একজন আলেম হতে হবে না, কিন্তু মূর্খ থাকাও চলবে না। শিখুন, পড়ুন এবং অধ্যয়ন করুন। আর আল্লাহ আমাদেরকে কুরআনে বলেছেন, فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ - ফাসআলু আহলায যিকরি ইন কুনতুম লা তা’লামুন, অর্থাৎ জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করো যদি তুমি না জেনে থাকো। মানুষকে জিজ্ঞেস করুন, জ্ঞানীদের কাছ থেকে শিখুন যদি আপনি না জেনে থাকেন।
জ্ঞানের পথ পরিক্রমাই আমাদের মর্যাদাকে উন্নত করে। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, ‏‏يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ - ইয়ারফা’ইল্লাহুল্লাযিনা আমানু মিনকুম ওয়াল্লাযিনা উতুল ‘ইলমা দারাজাত, অর্থাৎ আল্লাহ ইমানদারদের মর্যাদা উন্নত করবেন এবং জ্ঞানীদের মর্যাদাও উন্নত করবেন অনেক অনেক উচ্চ স্তরে। শুধু শেখার মাধ্যমেই আপনার উঁচু মর্যাদা আরো উঁচু হবে। শুধু কোনো কিছু জানার কারণে আপনি আল্লাহর আশির্বাদ পেয়ে ধন্য হবেন। তো জানার জন্য উৎসাহী হোন। সবসময় কৌতুহলোদ্দীপ্ত হয়ে থাকবেন। অপ্রয়োজনীয় জিনিসে সময় নষ্ট করবেন না। যদি কিছুটা অবসর সময় পান, অধ্যয়ন করুন এবং পড়ুন। আর আমি আবারো বলছি, জ্ঞান বলতে আমি শুধু ইসলামের জ্ঞানের কথাই বলছি না। কোনো সন্দেহ নেই যে, ইসলামের জ্ঞান অর্জন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কুরআনে বর্ণিত জ্ঞানের ধারণা হলো, যে কোনো ধরণের জ্ঞান। সূরা আলাক আমাদের তা-ই শিখাচ্ছে; তাই না ? عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ - ‌’আল্লামাল ইনসানা মা লাম ইয়া’লাম, অর্থাৎ আল্লাহ মানুষকে শিখিয়েছেন যা সে জানতো না। اِقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ - ইকরা ওয়ারব্বুকাল আকরাম; আল্লাহ শিখিয়েছেন - الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ - আল্লাযি ‘আল্লামা বিলক্বলাম। সকল ধরণের বিজ্ঞান যা প্রাকৃতিক, যা ক্ষতিকর নয়, এগুলো আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানেরই অংশ। আর ইনশা আল্লাহ, আমরা যদি জ্ঞানকে অগ্রাধিকার দেয়ার গুণে ফিরে আসি, তাহলে একসময়ে এই উম্মারর যে মর্যাদা ছিলো তা-ও আমরা ফিরিয়ে আনতে পারবো। আর প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, উপলব্ধি করুন যে, আল্লাহর নামগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘আলীম (عَلِيْم) এবং ‘আল্লাম (عَلَّامْ), আর ‘আলীমুল গইবি ওয়াশ শাহাদাহ (عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَة), আল্লাহ হলেন ‘আল্লামুল গুইয়ুব (عَلَّامُ الْغُيُوْب)। আল্লাহ সবকিছুই জানেন। মহান আল্লাহ দয়া করে আমাদেরকে সামান্য কিছু জ্ঞান দান করেছেন। এর পরিমাণ সামান্যই। وَمَآ أُوتِيتُم مِّنَ ٱلْعِلْمِ إِلاَّ قَلِيلاً - ওয়ামা উতিতুম মিনাল ‘ইলমি ইল্লা ক্বলিলা। কিন্তু আমাদেরকে দেয়া সেই সামান্য জ্ঞান থেকেও যতই আমরা শিখবো ততোই আশির্বাদপ্রাপ্ত হবো। তাই মনে রাখবেন, قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ والَّذِينَ لا يَعْلَمُونَ - ক্বুল হাল ইয়াসতাওইল্লাযিনা ইয়ালামুনা ওয়াল্লাযিনা লা ইয়ালামুন। এই দুটি সমান নয়। জ্ঞানীদের যে দল রয়েছে, আসুন সেই দলে আমরাও শামিল হই। ইনশা আল্লাহ, আমরা আগামীকালও এই আলোচনা চলমান রাখবো। -- শায়েখ ইয়াসির কাদি

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট