আল্লাহ সবকিছু জানেন এর দ্বারা আসলে কী বোঝায়?

 আল্লাহ সবকিছু জানেন এর দ্বারা আসলে কী বোঝায়? (সম্পূর্ণ আলোচনার অনুবাদ)


-- নোমান আলী খান [একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ আলোচনাটি পড়ুন, দেখবেন মনটা অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে পূর্ণ হয়ে যাবে] আজ আমি আপনাদের সাথে আল্লাহর একটি নাম নিয়ে আলোচনা করবো যা কুরআনে বহু বার এসেছে। আর সে নামটি হল: আল-আলীম, যিনি সবকিছু জানেন। আল্লাহ কুরআনে বার বার উল্লেখ করেছেন - তিনি সবকিছু জানেন। "وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ" - যে আয়াতটির উদাহরণ দিয়ে আমি আলোচনা শুরু করতে চাই তা হল, কুরআনের ৬৪ তম সূরা, সূরা আত-তাগাবুনের একটি আয়াত। তিনি বলেন - يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَيَعْلَمُ مَا تُسِرُّونَ وَمَا تُعْلِنُونَ - “নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা আছে, তিনি তা জানেন। তিনি আরও জানেন তোমরা যা গোপনে কর এবং যা প্রকাশ্যে কর।” তাহলে আপনি যা সবার অগোচরে করেন আর যা সবার সম্মুখে করেন - আল্লাহ তার সবই জানেন। وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ - "এছাড়াও আল্লাহ অন্তরের অবস্থা সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞাত।" মানুষের মনের মাঝে যা লুকিয়ে আছে তার প্রকৃতি এবং আসল অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ সবসময় পুরোপুরি জানেন। এটি অসাধারণ একটি আয়াত। নতুন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এই আয়াত থেকে স্পষ্টত যা বুঝা যায় তার বাহিরে গিয়ে চিন্তা করুন। আমরা জানি, আল্লাহ সবকিছু জানেন। আমরা জানি, আমাদের বাহ্যিক ব্যাপারগুলো আল্লাহ যেমন জানেন তেমনি তিনি আমাদের গোপন ব্যাপারগুলোও জানেন। আমরা জানি, আল্লাহ সাত আসমানের সবকিছু জানেন। চলুন, এর থেকে কিছু বিষয় সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করে দেখি। আল্লাহ কিভাবে আমাদের নিকট তুলে ধরেন যে, আল্লাহ যা জানেন তা কোনদিনও কোনভাবেই আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আল্লাহর কোন নামের মর্ম উপলব্ধি করার একটি সর্বোত্তম পন্থা হল আমাদের নিজেদের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারা। তারপর তুলনা করলে বুঝতে পারব আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার ক্ষমতা কতটা ব্যাপক আর আমরা কতটা তুচ্ছ এবং অক্ষম বান্দা। চলুন, ইতিহাসের জ্ঞান দিয়ে শুরু করা যাক। কখন কোন যুদ্ধ হয়েছে, কোন রাজা জয়লাভ করেছে, কোন জাতির উপর বিজয়ী হয়েছে, একটি রাজবংশ কতবছর শাসন করছে এই ধরনের তথ্য উপাত্ত ঐতিহাসিকরা লিপিবদ্ধ করে থাকেন। কিন্তু আল্লাহ যেভাবে কুরআনে বিভিন্ন ঘটনার তথ্য প্রদান করেছেন একজন ঐতিহাসিকের পক্ষে কখনও সেভাবে কোন ঘটনা লিপিবদ্ধ করা সম্ভব নয়। যেমন, কথা বলার পূর্বে ফেরাউনের মনের অবস্থা কী ছিল? আল্লাহ শুধু আমাদেরকে ঘটনার বর্ণনাই দেন না বা কোন ধরনের কথাবার্তা হয়েছিল সে বর্ণনাই দেন না; বরং তিনি আমাদেরকে তার অন্তরের অবস্থার কথাও জানিয়েছেন। وَنُرِيَ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُودَهُمَا مِنْهُم مَّا كَانُوا يَحْذَرُونَ - “আর ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্য বাহিনীকে দেখিয়ে দিতে যা তারা তাদের (অর্থাৎ মূসার সম্প্রদায়ের) থেকে ভয় করত।” (২৮:৬) কে জানতো, ফেরাউন ভীত ছিল? কোন ঐতিহাসিক জানতো তার অনুভূতির কথা? কিন্তু আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা সেটাই কুরআনে বিবৃত করেছেন। একবার চিন্তা করে দেখুন, কীভাবে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা ইব্রাহিম (আ) এর দোয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। আশে পাশে কেউ ছিল না, ইব্রাহিম (আ) একাই মরুভূমিতে পথ চলছিলেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলেন। কোন ঐতিহাসিক সেখানে ছিল না, অন্য কোন মানুষ ছিল না যে এই ঘটনা লিপিবদ্ধ করবে। হাজার হাজার বছর পরে আমরা হুবহু জানি আল্লাহ এবং ইব্রাহিম (আ) এর মাঝে কোন ধরণের কথোপকথন হয়েছিল। আল্লাহ ঠিক এমনভাবে ইতিহাস জানেন যেভাবে আমাদের পক্ষে কোনদিন জানা সম্ভব হবে না। আর তিনি ইতিহাসকে এমন দৃষ্টিকোণ থেকে জানেন, ইতিহাসের কোন বইতে যার কোন উল্লেখ পাবেন না। ----------------- * ------------------ কোন কোন সময় মানুষ কুরআনের সমালোচনা করে বলে, কুরআনে কোন সন তারিখ নেই, ইতিহাস বলার সময় ভৌগলিক অঞ্চলের কোন উল্লেখ নেই, শুধু কিছু ঘটনার বর্ণনা আছে। কিন্তু আল্লাহ এমন ধরণের ইতিহাস বর্ণনা করেন মানবজাতির পক্ষে যা কোনোদিন জানা সম্ভব নয়। আর মানুষেরা নিজেরা যা খুঁজে বের করতে পারবে আল্লাহ তার বর্ণনা প্রদান করেন না। وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ - তোমাদের শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না। (2:151) এগুলো হল ইতিহাসের কয়েকটি উদহারণ মাত্র। এই ব্যাপারটা নিয়ে একবার চিন্তা করে দেখুন, আমাদের পক্ষে কোনোদিন জানা সম্ভব ছিল না যে সাতটি আকাশ রয়েছে। মানুষ কীভাবে এটা জানতো? আমরা এমনকি জানি না প্রথম আকাশ কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে। আল্লাহ বলেন - وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ - "আমি সর্বনিম্ন আকাশকে নক্ষত্র দ্বারা সুসজ্জিত করেছি।" সর্বনিম্ন আকাশকে তিনি তারকারাজির দ্বারা সুসজ্জিত করেছেন। বর্তমানে আমাদের কাছে যত ধরণের টেলিস্কোপ আছে, যত ধরণের টেকনোলজি আছে, যত কিছুর মাধ্যমে আমরা এখন বিলিয়ন বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের জিনিস সম্পর্কে জানতে পারছি, আমরা তো সর্বত্র তারকারাজিই দেখতে পাচ্ছি, তাই না? তাহলে এই সংজ্ঞানুযায়ী আমরা আসলে যা দেখছি, ইউনিভার্সের যত গহিনেই তাকাই না কেন, এই সবকিছু আসলে এখনো প্রথম আকাশের অংশ। আর আল্লাহ আমাদের বলেছেন সাতটি আকাশ রয়েছে। আল্লাহ কুরআনে আমাদের যে তথ্য জানিয়েছেন মানুষের পক্ষে এটা কোনোদিনও জানা সম্ভব হত না। কোন মানুষ জানে যে আমাদের মৃত্যুর পরে কী হবে? আমি আর আপনি কীভাবে জানব আমাদের শরীরের কী হবে? কোন ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হব আমরা? পুনরুত্থান দিবসে কী হবে? বিচার দিবসের প্রকৃতি কেমন হবে? কোন কোন প্রশ্ন করা হবে? আমাদের কেমন দেখাবে? আমাদের শেষ ঠিকানা কোথায় হবে? ঘটনাগুলো কীভাবে একের পর এক সংঘটিত হবে? জান্নাত দেখতে কেমন? জান্নাত কাকে বলে? এর বর্ণনা কেমন? কোন ধরণের মানুষ এতে বসবাস করবে? তারা কোন ধরণের কথাবার্তা বলবে? আবারো বলছি, ঐতিহাসিকদের এবং মানবজাতির অতীত কোন ঘটনার জ্ঞান থাকতে পারে এবং বর্তমানের জ্ঞান থাকতে পারে, কিন্তু আল্লাহর এমনকি ভবিষ্যতের জ্ঞানও রয়েছে। সুদূর ভবিষ্যতে জান্নাতের মানুষদের মাঝে কোন ধরণের কথোপকথন হবে সেটাও আল্লাহ ইতোমধ্যে জানেন। আর আল্লাহ আমাদেরকে তা এমনভাবে বলছেন যেন ইতোমধ্যে সেটা ঘটে গিয়েছে। বুঝতে পারছেন? وَكَانَ وَعْدًا مَّفْعُولًا - “এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল।” (১৭:৫) আল্লাহ যে কত বেশি জানেন! এটি শুধু তার একটি ইঙ্গিত মাত্র। আমরা কেমন করে ফেরেশতাদের কথা জানতাম? আমি আপনি কীভাবে জানতাম - وَيُرْسِلُ عَلَيْكُمْ حَفَظَةً - “তিনি প্রেরণ করেন তোমাদের কাছে রক্ষণাবেক্ষণকারী (ফেরেশতা)।” (6:61) কীভাবে আমরা জানতাম যে দুই কাঁধের ফেরেশতারা আমাদের সকল কর্ম লিপিবদ্ধ করছেন? কিরামান কাতেবিন, সম্মানিত লেখকবৃন্দ। আমরা কীভাবে জানতাম যে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যেম আমার আপনার রিজিকের দরজা খুলে যায়। اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا - يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا - "তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি আকাশকে তোমাদের উপর অঝোর ধারায় বর্ষণ করাবেন।" (৭১ঃ ১০-১১) (আল্লাহ বলেননি যে, পানি বর্ষিত হবে। তিনি বলেছেন, আকাশ বর্ষণ করবে। কারণ আকাশ শুধু বৃষ্টি নয় আরো রহমত বর্ষণ করতে পারে। আকাশ থেকে ক্ষমা আসে, আকাশ থেকে প্রশান্তি আসে, বিশ্বাস আসে, রিয্ক আসে, সমস্যার সমাধান আসে আসমান থেকে। তিনি তোমাদের জন্য আকাশ খুলে দিবেন আর আকাশের সকল সম্পদ তোমাদের উপর অঝোর ধারায় বর্ষিত হতে থাকবে।) আমরা কোনোদিনও জানতাম না - শুধু আল্লাহর দিকে ফিরলে এবং তার নিকট ক্ষমা চাইলে আপনি নতুন চাকরি পাবেন। এর ফলে আপনার বাচ্চার স্বাস্থ্য ভাল হয়ে যাবে। এটা আপনার জীবনের এমনসব সমস্যার সমাধান করে দিবে আগে যার কোন সমাধান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আর আল্লাহ এটাই বলেছেন - وَيُمْدِدْكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا - "তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।" ক্ষমা এবং রিজিকের এই সংযোগ কোন মানুষ কোনোদিন স্থাপন করতে পারত না। আমাদের পক্ষে কোনভাবেই এই জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব ছিল না। কোন বিজ্ঞান, কোন রিসার্চ, কোন ল্যাবরেটরি এটা আবিষ্কার করতে পারত না। এই জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকেই আসা সম্ভব। অবশ্যই সব রহস্যের সবচেয়ে বড় রহস্য...আমরা কীভাবে জানতাম কে আল্লাহ? তিনি কোন ধরণের প্রভু? কোন ধরণের রব তিনি? তিনি আমার আপনার সাথে কোন ধরণের সম্পর্ক চান? আমরা কোনোদিন জানতাম না। মানুষ বুঝতে পারত যে একজন রব আছেন, কিন্তু তিনি আসলে কেমন? তিনি কী পছন্দ করেন আর কী অপছন্দ করেন? তিনি আমার কাছ থেকে কী চান? আমার জন্য তাঁর পরিকল্পনা কী? তিনি আমার কাছ থেকে কী আশা করেন? আমরা নিজেরা এই ব্যাপারগুলো কোনোদিন জানতাম না; যদি আল্লাহ আমাদের না শেখাতেন। ------------------------ এই আলোচনার হাত ধরে সমীকরণের পরবর্তী অংশটির উপর আলোকপাত করতে চাই। আশা করছি কয়েকটি উপমার মাধ্যমে আমি বিষয়টি আমার এবং আপনাদের সবার নিকট পরিষ্কার করে তুলে ধরতে পারব। আপনার যদি কখনো শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয় যেমন সর্দিকাশি বা জ্বর হয়, তখন ডাক্তারের কাছে যান। আর ডাক্তার অবশ্যই মানুষের শরীর সম্পর্কে জানেন, চিকিৎসা জানেন। তিনি আপনার শরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন আপনি অমুক রোগে আক্রান্ত। তিনি শরীর চেক করে বলেন, আমার মনে হয় আপনার ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন হয়েছে, বা আপনার শরীরে অমুক ভাইরাস আছে বা এলার্জি আছে - যাই বলুক না কেন.... এমন কি হতে পারে ডাক্তার যে চিকিৎসা আপনাকে দিয়েছে তা ভুল? আমরা সবাই জানি, এমন ঘটনা অহরহ ঘটে। তিনি হয়তো আপনার অন্য সমস্যাগুলো চেক করেননি, লিভার পরীক্ষা করে দেখেননি, তিনি শুধু আপনার হার্ট রেট বা অন্য কিছু পরীক্ষা করে দেখেছেন, তাই তিনি ধরতে পারেননি যে সমস্যাটা আসলে অন্য জায়গায় ছিল। ঠিক কিনা? তাহলে, আমরা অনেক সময় কোনো বিষয়ের একটি দিকের প্রতি মনোযোগ দেই, কিন্তু জানি না যে, একই সময়ে অন্য আরও অনেক কিছুও ঘটছে যা এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। মেডিক্যালের জগত থেকে আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি। যদিও, আমি দূরতম কল্পনায়ও চিকিৎসা পেশার সাথে জড়িত নই। শুধু একটি উদাহরণ দিচ্ছি মাত্র। কারো হয়তো হার্টের সমস্যা বা ব্লাড প্রেশারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু তাদেরকে উপদেশ দেওয়া হয় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করার জন্য, বা কোন প্রসিডিউর সম্পর্কে উপদেশ দেওয়ায় হয়। হতে পারে এই সমস্যার অন্যতম মূল কারণ, বাসায় প্রচুর প্রেশারে থাকতে হয় বা অনেক ঝগড়া-ঝাটি হয়। তাই, প্রচুর চাপের কারণে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণে ব্লাড প্রেশার এবং হার্ট রেটের স্বাভাবিকতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সুতরাং, মনস্তাত্ত্বিক কিছু হয়তো ঘটছে যা শারীরিক সমস্যা তৈরি করছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, রোগ নির্ণয়ের জন্য মাঝে মাঝে আমরা শুধু একটি দিকের প্রতি নজর দিয়ে থাকি, আমরা সকল দিকে দৃষ্টি প্রদান করি না। চলুন, মেডিক্যাল জগতের বাহিরে থেকে চিন্তা করি। হয়তো কারো কাছে গেলেন কিছু উপদেশ নেওয়ার জন্য। অথবা, কেউ আপনাকে উপদেশ দিল। সে আপনার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার মনে হয় তুমি সমস্যায় আছ। চল, তোমাকে কিছু উপদেশ প্রদান করি। আর আপনি মনে মনে ভাবছেন, "ভাই, তুমি আমাকে উপদেশ দিচ্ছ, কিন্তু তুমি তো সত্যিকার অর্থে আমাকে চিন না। তুমি তো গোটা পরিস্থিতির কথা জানো না। আরও যে কত কিছু আমার জীবনে ঘটছে তার সম্পর্কে তোমার তো কোন ধারণাই নেই। তুমি মনে করেছ, আমার সমস্যা বুঝে গেছ, কিন্তু তুমি তো পুরা সমস্যাটার কথা জানো না। তোমার কাছে এমনকি সম্পূর্ণ চিত্রটাও নেই।" আর আপনি যদি তাকে পুরা সমস্যাটার কথা বলেনও... কেউ উপদেশ দেওয়ার পূর্বে কখনো কখনো আপনি হয়তো তার কাছে সম্পূর্ণ সমস্যাটা খুলে বলেন। এমনকি সে আপনার কাছ থেকে পুরা ব্যাপারটা শোনার পরেও আপনি যেভাবে চান সেভাবে সে বুঝেনি। তারপর সে উপদেশ দিলে আপনি বলেন - "আমার মনে হয় তুমি এখনো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারোনি আমি কেমন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যদিও আমি তোমাকে সব খুলে বলেছি।" বুঝতে পারছেন? তাহলে, এমনকি কেউ যদি কখনো আমাদের উপদেশ দিতে চায়, উপদেশটা হয়তো আমাদের সমস্যার পরিপূর্ণ উপলব্ধির উপর ভিত্তি করে নাও হতে পারে। আর ব্যাপারটা হতাশা তৈরি করতে পারে। কারণ, আমি যা বোঝাতে চাচ্ছি সে তা বুঝতে পারছে না। এর আরেকটি উদাহরণ হল, এমনকি আমাদের নিজেদের ক্ষেত্রেও। যদি কোন সমস্যায় পড়েন, আপনার বুদ্ধি হয়তো নির্দিষ্ট কিছু উপায় অবলম্বন করে সমস্যা থেকে মুক্তির একটি পথ বাতলে দেয়। আপনি নিজেকে বলেন, আমাকে অমুক অমুক কাজটি করতে হবে। নিজেকে যে উপদেশই দেন না কেন...যেহেতু আপনি ক্লান্ত, উদ্বিগ্ন, রাগান্বিত, এবং অন্য আরও হতাশাও হয়তো আছে...ঠিক এমন মুহূর্তে নিজেকে এক ধরণের উপদেশ প্রদান করেন। কিন্তু যদি ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতেন তাহলে হয়তো নিজেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন উপদেশ দিতেন। দিতেন কিনা? অথবা, যদি নিজেকে একটু চিন্তা করার সুযোগ দিতেন তাহলে হয়তো এমন অনেক বিষয় বিবেচনায় নিতেন যা তখন নেননি। অন্য কথায়, আমরা যখন নিজেদেরকে কোন সমাধানের পথ বাতলে দেই, এমনকি আমরা যখন নিজেদেরকে কোন উপদেশ দেই সেটাও পক্ষপাতদুষ্ট। আমরা এমনকি নিজেদেরকেও সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ উপদেশ প্রদান করতে পারি না। আমরা এমনকি এই কাজেরও যোগ্য নই। আমি বার বার উপদেশ দেওয়ার কথা বলছি। ডাক্তার সম্ভবত আপনাকে আংশিক উপদেশ প্রদান করছে, বন্ধু বা পরিবারের কোন সদস্যও আপনাকে আংশিক উপদেশ দিতে পারে, আপনি নিজে নিজেকে আংশিক উপদেশ দিতে পারেন। যে কারণে আমি এই সমস্ত উদাহরণ আপনাদের নিকট তুলে ধরেছি তা হল, যখন আল্লাহ বলছেন তিনি সবকিছু জানেন। তারপর তিনি বলছেন তিনি আমাদেরকে উপদেশ প্রদান করেন। "কাদ যা আতকুম মাওইজাতুম মির রাব্বিকুম" (তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে উপদেশবাণী এসেছে)(10:57) আল্লাহ তাঁর নিজের সম্পর্কে বলেছেন - "ওইউ আল্লিমুকুমুল্লাহ" আল্লাহ তোমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন। "ওল্লাহু বি কুললি শাইইন আলিম" আর আল্লাহ সবকিছু জানেন। আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞাত। এর মানে কী জানেন? এর মানে হল, তিনি আপনার অবস্থা সম্পূর্ণরূপে জানেন। এমনকি আমরা নিজেরা নিজেদের অবস্থা যতটুকু বুঝি তার চেয়েও তিনি ভালো জানেন। তিনি জানেন আমাদের সমস্যাগুলো, আমাদের অনুভূতিগুলো, আমাদের ভাবনাগুলো, যে ভাবনাগুলো আমরা প্রকাশ করেছি আর যে ভাবনাগুলো আমাদের মাথায় গোপনে চলছে, যার সম্পর্কে কারো কোন ধারণাই নেই। কখনো কখনো আপনার মাথায় হয়তো একটা ব্যাপার ঘুরছে, চেহারা কিছুটা চিন্তিত দেখাচ্ছে, আপনার স্বামী বা স্ত্রী, ছেলে বা মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করে - কী হয়েছে তোমার? আপনি বলেন - কিছুই না। যদিও অনেক কিছু মাথায় ঘুরছে। কিন্তু আপনি বলেছেন - কিছুই না। কারণ, আপনি জানেন, তারা এটা সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহ জানেন, কিছুই না মানে যে অনেক কিছু। তিনি একেবারে সঠিকভাবে জানেন, কোন ধরণের দুশ্চিন্তায় আপনি ভুগছেন। আর এই সবকিছু পরিপূর্ণরূপে জেনেই তিনি আপনাকে উপদেশ দিয়ে থাকেন। অনেক সময় আমরা এরকম অন্যায্য চিন্তা করি যে, কুরআন এসেছে শুধু আমাদের ধর্মীয় উপদেশ দিতে। একজন ডাক্তার যেমন মেডিক্যাল উপদেশ দিয়ে থাকেন, একজন ম্যাকানিক যেমন গাড়ির বিষয়ে উপদেশ দিয়ে থাকেন, একাউন্ট্যান্ট যেমন অর্থসংক্রান্ত উপদেশ দিয়ে থাকেন, ঠিক তেমনি কুরআন আমাদেরকে ধর্মীয় উপদেশ প্রদান করে। কিন্তু আল্লাহ তো শুধু ধর্মীয় ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নন। আল্লাহর জ্ঞান আপনার আমার জীবনের সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে। আপনার ভেতরে যা কিছু হচ্ছে, শারীরিকভাবে যা আপনার জন্য সর্বোত্তম, অর্থনৈতিকভাবে যা আপনার জন্য সর্বোত্তম, যা কিছু সামাজিকভাবে, আবেগের দিক থেকে, মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে, আধ্যাত্মিক দিক থেকে, স্বাস্থ্যগত দিক থেকে আপনার জন্য সর্বোত্তম আল্লাহ তাঁর সবই জানেন। কারণ, এই সবকিছু আল্লাহই করছেন। তিনিই আমাকে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। "আলা ইয়া'লামু মান খালাক" যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না? আমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে জেনেই তিনি আমাদেরকে উপদেশ দিয়ে থাকেন। তাই, এই উপদেশ শুধু এক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, শুধু এক পক্ষীয় নয়। মানুষ সাধারণত এক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয় সমূহ দেখে থাকে। আর আল্লাহ সকল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন। এ জন্যই আল্লাহ বলেন - "লা ইউদ্রিকুহুল আবসার…" "“চক্ষুসমূহ তাকে আয়ত্ব করতে পারে না। আর তিনি চক্ষুসমূহকে আয়ত্ব করেন।" তিনি নিজেই বলেছেন। ইউদরিকুহুল আবসার - তিনিই সকল দৃষ্টি নাগালে রাখেন। সকল দৃষ্টিভঙ্গি তার নাগালে। তো, এমন নয় যে আল্লাহ আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় নেননি। কখনো কখনো মানুষ আল্লাহর বই থেকে কোন উপদেশ শুনে অথবা আপনি নিজেই আল্লাহর বইয়ের কোন উপদেশ নিয়ে চিন্তাভাবনা করে বলেন - হ্যাঁ, এটা একটা ভালো ধর্মীয় বক্তব্য। কিন্তু আমার পরিস্থিতি স্পেশাল, এই উপদেশ আমার জন্য প্রযোজ্য নয়। কেননা মানুষ তো আর আমার অবস্থা পুরোপুরি জানে না। হ্যাঁ, আমি নোমান আপনার অবস্থা সম্পূর্ণরূপে জানি না। অন্য একজনও হয়তো আপনার পরিস্থিতির বিষয়ে পুরোপুরি অবগত নয়। কিন্তু আল্লাহ নিশ্চিত ভাবেই জানেন। আর আল্লাহ এই উপদেশগ্রন্থ মানব জাতিকে দিয়েছেন প্রত্যেকটা মানুষ সম্পর্কে জেনে, তাদের সকল সমস্যা, তাদের সকল প্রয়োজনের কথা একত্রে জেনেই। ইনিই হলেন আল্লাহ, আল-আলিমুন হাকিম। আল্লাহ জ্ঞানী এবং সুবিজ্ঞ। এই বইটি প্রজ্ঞাময়। আল-আলিম নামের সাথে যুক্ত হয়ে আল্লাহর যে নামটি অনেকবার কুরআনে এসেছে তা হল, আস-সামি' তিনি শুনে থাকেন। তিনি শুনেন। ওয়াল্লাহু সামিউন আলিম। ইন্নাল্লাহা হুয়াস সামিউল আলিম। তিনি শুনেন এবং তিনি জানেন। মানব জাতি আল্লাহর কাছে কাঁদছে, নিজেরা একে অন্যের কাছে কাঁদছে এবং অন্যদের কাছে নিজের সমস্যাগুলোর কথা বলছে অথবা নিজেই নিজের সাথে কথা বলছে একেবারে ইতিহাসের শুরু থেকে। আর আল্লাহ এর সবকিছুই শুনেছেন। সবকিছু। আর এই সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই তিনি আমাদেরকে কুরআন দিয়েছেন। এটা আমাদের প্রতি আল্লাহর দয়া। যখন তিনি বলছেন - তোমাদের রবের পক্ষ থেকে একটি উপদেশ এসেছে। ওয়া শিফাউল লিমা ফিস সুদূর। এটা এসেছে তোমাদের বুকের ভেতর যা আছে তার চিকিৎসা দিতে। কারণ, তিনি জানেন আমাদের বুকের ভেতরে কী হচ্ছে? তিনি জানেন আমি কী অনুভব করছি। তিনি জানেন আমি কিসের মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। ঠিক যেমন একজন ডাক্তার আপনাকে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন, প্রেসক্রিপ্সন দিয়ে থাকেন অনেক সময় যা মানতে ভালো লাগে না। আপনার যদি দাঁতের সমস্যা থাকে, কোন ডাক্তার আপনাকে বলবে না যে, "আমার মনে হয় তুমি যথেষ্ট পরিমাণে চকলেট খাচ্ছ না। তোমার যা ভালো লাগে তাই করা উচিত।" মাঝে মাঝে এমন চিকিৎসা দেওয়া হয় যা পালন করা অনেক কষ্টের। কখনও কখনও রুট ক্যানাল করতে হয়। ঠিক কিনা? কখনো কখনো আপনার জন্য সর্বোত্তম হল, সার্জারি করা। কখনো কখনো আপনাকে কষ্টকর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়, কারণ আপনার জন্য এটি উত্তম। কখনো দেখা যায়, কারো শরীরের কোন একটি অঙ্গে ভয়ংকর রকমের অসুখ হয়, আর তা শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ছে। তখন ঐ অঙ্গ কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়। শরীরের কোন একটি অঙ্গ হারিয়ে ফেলা অকল্পনীয় বেদনাদায়ক। আপনাকে তখন দুইটার যে কোন একটি বেছে নিতে বলা হয়। হয় ঐ অঙ্গ কেটে ফেলুন নতুবা ক্যান্সার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়বে। এই দুইটাই আপনার অপশন। তাহলে কখনো কখনো খুবই কষ্টদায়ক পরামর্শ দেওয়া হয় আপনাকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয় বরং ধ্বংস থেকে বাঁচানোর জন্য। মহাক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য। "আসা আন তুহিব্বু শাইয়ান ওয়া হুয়া শাররুল লাকুম।" এমন হতে পারে যে, কোন জিনিস আপনার দারুণ পছন্দ কিন্তু এটা আসলে আপনার জন্য ভালো নয়। "আন তাকরাহু শাইয়ান ওয়া হুয়া খাইরুল লাকুম।" এমনও হতে পারে কোন জিনিস আপনি অপছন্দ করেন কিন্তু এটা আসলে আপনার জন্য উত্তম। কোনটা আমাদের জন্য ভালো আর কোনটা ভালো নয় আমরা তা দেখি বা না দেখি আল্লাহ তাঁর জ্ঞান থেকে আমাদেরকে উপদেশ দান করেন। তিনি আমাদের সাথে কথা বলেন, আমাদেরকে শিক্ষা দান করেন। আল্লাহ বলেন - ওয়াত্তাকুল্লাহ ওয়া ইউয়াল্লিমুকুমুল্লাহ। "আল্লাহ সম্পর্কে সচেতন থাকো এবং আল্লাহ তোমাদের শিক্ষা দান করেন।" এই বিষয়ে সর্বশেষ যে কথাটি বলতে চাই তা হল, ভালো এবং মন্দের তফাৎ। আল্লাহ মানব জাতির সকলকে ভালো এবং মন্দের মাঝে পার্থক্য করার জ্ঞান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যে ধর্ম থেকেই আসুন না কেন, যে সংস্কৃতি থেকেই আসুন না কেন, আপন জানেন মিথ্যা বলা খারাপ। আপনি জানেন প্রতারণা করা ঠিক নয়। আপনি জানেন চুরি করা ঠিক নয়। আপনি জানেন কাউকে কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়। আপনি জানেন এতিমকে ধাক্কা দেওয়া ঠিক নয়। আপনি জানেন অসহায়ের প্রতি অত্যাচার করা ঠিক নয়। আপনি জানেন কাউকে অপমান করা ঠিক নয়। আপনি জানেন এগুলো খারাপ, বিশ্বের যে প্রান্তেই আপনি বাস করেন না কেন, যে সংস্কৃতি থেকেই আসেন না কেন, যে সমাজ থেকেই আসেন না কেন - আল্লাহ এই ব্যাপারটি মানুষের প্রকৃতিতে সেট করে দিয়েছেন। আমরা এই পৃথিবীতে আসার পূর্বেই আল্লাহ আমাদের ভেতরে এটা প্রোগ্রাম করে দিয়েছেন। সুতরাং এটা সার্বজনীন। কিন্তু এর বাহিরেও এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা কোনোদিনও জানতাম না যে ব্যাপারগুলো ভালো নাকি মন্দ। মৌলিক কিছু নৈতিকতা রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে সবাই জানে। আল্লাহ সকলকে এগুলো শিখিয়েছেন। কিন্তু এর বাহিরে কোনটা ভালো কোনটা মন্দ আমরা কোনোদিনও জানতাম না। আমি কোনভাবেই জানতে পারতাম না যে হিংস্র পাখির গোস্ত খাওয়া ঠিক নয়। আমি কোনভাবেই জানতে পারতাম না নির্দিষ্ট কিছু প্রাণীর মাংস খাওয়া ঠিক নয়। আমি কোনোদিনও জানতে পারতাম না যে, দিনের সুনির্দিষ্ট কিছু সময়ে আমার জন্য নামাজ পড়া উত্তম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, খুবই নির্দিষ্ট সময়ে, ঠিক কিনা? আমার পক্ষে কোনভাবেই জানা সম্ভব ছিল না যে এটা আমার জন্য সর্বোত্তম। আমি কোনভাবেই এটা জানতে পারতাম না। অতএব, ভালো মন্দের পার্থক্যের ব্যাপারে মানুষের কিছুটা জ্ঞান এমনিতেই আছে। কিন্তু আল্লাহর রয়েছে এর পরিপূর্ণ জ্ঞান। তাই, আল্লাহ যখন আমাকে আপনাকে বলেন অমুক কাজটি করা ঠিক নয়, এবং যখন আল্লাহ আমাকে আপানাকে বলেন অমুক কাজটি করা ঠিক, তখন আমাকে আপনাকে আমাদের জ্ঞানকে - যা আমাদের নিকট ঠিক বা বেঠিক মনে হয় - একদিকে সরিয়ে রাখতে হবে। আমাদেরকে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করতে হবে এটা মনে করে যে, আমাদের পক্ষে যতকিছু জানা সম্ভব তার চেয়ে আল্লাহ বেশি জানেন। আল্লাহ হলেন আল-আলিম। আল্লাহর কাছেই সকল জ্ঞান। আর আল্লাহ জানেন সঠিক কাজটি আমাদের জন্য সবসময় উত্তম। কখনো কখনো আমরা আল্লাহর উপদেশ নেওয়ার সময় যে দ্বিধা করি তার কারণ হল, আমরা মনে করি আল্লাহর উপদেশ শুনলে আমাদেরকে কষ্টে পড়তে হবে। প্রকৃত ব্যাপার হল, অনেক সময় আল্লাহর কথা শুনলে আসলেই কষ্ট পেতে হয়। এটা জীবনের একটি বাস্তব সত্য। আল্লাহর কথা মান্য করলে কখনো কখনো অসুবিধায় পড়তে হয়, আরামে নয়। সবচেয়ে সেরা যে মানুষেরা আল্লাহর উপদেশ শুনেছিলেন তারা ছিলেন নবী-রাসূলেরা। আর তাদের জীবন ছিল সমস্যায় পরিপূর্ণ। ঠিক কিনা? তাহলে আল্লাহর অনুসরণ করলে সমস্যায় পড়তে হবে। কিন্তু সেই সমস্যা আপনার জন্য অগণিত গুণে উত্তম যে কোন সহজতার চেয়ে যেটা আল্লাহর অবাধ্যতা করলে হয়তো আসতে পারে। এটা সত্য। সত্য হল, যদি আপনি তাঁর কথা না শুনেন এবং সহজ কোন উপায় নিজের জন্য খুঁজে নেন...তখন আপনার হয়তো মনে হতে পারে আপনি ভালো আছেন, নিরাপদে আছেন, এটা আপনার জন্য উত্তম, আপনি নিজেকে মিথ্যা প্রবোধ দিতে পারেন, নিজেকে বলতে পারেন এটা আপনার জন্য উত্তম। কিন্তু সত্য হল, আপনি নিজেকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছেন এবং আমিও নিজেকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছি। আমি দোয়া করছি, আল্লাহ সবকিছু জানেন এর দ্বারা আসলে কী বোঝায় তা যেন আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদেরকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উপলব্ধি করার সামর্থ্য দান করেন। আর এই জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে আমরা যেন সহজে তাঁর উপদেশের প্রতি আস্থা রাখতে পারি, তাঁর পরামর্শের প্রতি আস্থা রাখতে পারি এবং সে অনুযায়ী জীবন যাপন করতে পারি। ************★**********
source-nakinbangla/youtube

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট