জাকাতের হিসাবপদ্ধতি
জাকাতের হিসাবপদ্ধতি
যেদিন অর্থসম্পদ নিসাব পর্যায়ে পৌঁছাবে, সেদিন থেকেই জাকাত বর্ষ গণনা শুরু হবে। নিসাব পরিমাণ ও তদূর্ধ্ব সম্পদের মালিককে তার জাকাতযোগ্য সব সম্পদের চান্দ্রবর্ষের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর আড়াই শতাংশ (৪০ ভাগের ১ ভাগ) হারে প্রদান করতে হয়। চান্দ্রবর্ষ ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে হয়, যেহেতু সৌরবর্ষ ৩৬৫ দিনে বা ৩৬৬ দিনে হয়, তাই সৌরবর্ষ অপেক্ষা চান্দ্রবর্ষ ১০ বা ১১ দিন কম। সৌরবর্ষ হিসাবে জাকাত প্রদান করতে চাইলে শতকরা ২ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ২ দশমিক ৫৭৮ শতাংশ বা ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ দিতে হবে। অথবা মূল জাকাতের সঙ্গে অতিরিক্ত ১১ দিনের হিসাব যোগ করতে হবে। অনুরূপ কারও জাকাত সমাপনী হিসাব তারিখ রমজানে না হলে, তিনি অতিরিক্ত সময়ের জাকাত সমন্বয় করে রমজানে জাকাত হিসাব তারিখ নিয়ে আসতে পারেন।
সোনা, রুপা, নগদ টাকা ও ব্যবসা পণ্য এ তিন খাতে জাকাত বর্ষপূর্তি বা জাকাত হিসাব সমাপনী দিনে যত সম্পদ থাকবে, পুরোটারই জাকাত দিতে হবে। বছরের মধ্যে যেকোনো সময় অর্থাগমন ঘটলে, বছর শেষে জাকাত প্রদান করতে হবে। প্রত্যেক বছর একই তারিখে ও একই সময়ে জাকাতের হিসাব করতে হয়। যেমন: ১ রমজান সন্ধ্যা ৬টা। এই সময়ের এক সেকেন্ড আগে যে সম্পদ আসবে, তা জাকাত হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে। এই সময়ের এক সেকেন্ড পরে যে সম্পদ আসবে, তা পরবর্তী বছরের হিসাবে যাবে।
স্থাবর সম্পদ, জায়গাজমি, বাড়ি ও গাড়ি যা বিক্রয়ের জন্য রাখা হয়নি, তা জাকাত হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না। গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট ও জমি যেগুলো বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে, সেগুলোর বর্তমান বিক্রয়মূল্য (বাজারদর) জাকাতের হিসাবে আসবে এবং এর মূল্য হিসাব করে প্রতিবছর (যদি থাকে) জাকাত দিতে হবে।
যৌথ মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির জাকাত ক্ষেত্রে মালিকদের সম্পদ আলাদা হিসাব করে দিতে হবে। এ সম্পদের মালিক যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন বা তার অন্য সম্পদসহ যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ হয়, তবে জাকাত তার দিতে হবে; অন্যথায় নয়। যৌথ মালিকানায় কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান সম্মিলিত সম্পদ থেকে জাকাত প্রদান করলে সে সম্পদের জাকাত পুনরায় দিতে হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে মালিকদের বা অংশীদারদের পূর্বানুমতি নিতে হবে। কোম্পানির যদি এমন কোনো অংশীদার থাকে, যার সম্পদ নিসাব
পরিমাণ নয় অথবা তার এ সম্পদ ও অন্যান্য সম্পদ মিলেও নিসাব পরিমাণ হবে না। তাহলে তাকে জাকাত প্রদানে বাধ্য করা জায়েজ নয়। কারণ তার ওপর জাকাত ফরজ হয়নি; বরং তিনি নিজেই জাকাত গ্রহণের যোগ্য। মালিক নিসাব হলেও সব অংশীদারের জাকাত বর্ষের শুরু ও শেষ এক না–ও হতে পারে।
জাকাতের হিসাব থেকে তাৎক্ষণিক পরিশোধযোগ্য ঋণ এবং কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য ঋণের চলমান কিস্তির পরিমাণ অর্থ বাদ যাবে। যেসব ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকেন, কখনো দেখা যায় তাঁদের সম্পদ অপেক্ষা ঋণের পরিমাণ বেশি। এ অবস্থায়ও তাঁদের ঋণ ধর্তব্য হবে না; বরং তাঁর ওই তিন খাতের সমুদয় সম্পদেরই জাকাত প্রদান করতে হবে। কারণ, যদি তাঁদের এই ব্যবসায়িক ঋণকে প্রকৃত ঋণ হিসেবে গণ্য করে তার সম্পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়, তবে তাঁরা দেউলিয়া হিসেবে নিজেরাই জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত বলে পরিগণিত ও বিবেচিত হবেন।
l মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
prothomalo
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন