শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন।




 ❖ শয়তান মানুষকে কোন দিক দিয়ে ধোঁকা দেয়? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ চতুর্দিক দিয়ে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা হচ্ছে, মানুষকে ধোকায় ফেলতে যেসব ক্ষমতা পেয়েছে শয়তান। শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। মানুষকে সঠিক পথ থেকে সরিয়ে নিতে আল্লাহর কাছে ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছে শয়তান। আল্লাহ তাআলা শয়তানের সে আবদার মঞ্জুর করে তাকে অনেক বড় ক্ষমতা দিয়েছেন। শয়তানের পথভ্রষ্ট হওয়া ও মানুষের ক্ষতিতে ক্ষমতা লাভ ছিল তার অহংকার ও দাম্ভিকতা।

কুরআনুল কারিমে এ ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। সুরা আরাফে আল্লাহ তাআলা বলেন- >> আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরি করেছি। তারপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলছি- আদমকে সেজদা কর। তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলিস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। >> আল্লাহ বললেন- আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বলল, আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা। >> (আল্লাহ) বললেন তুই এখান থেকে নেমে যা। এখানে অহংকার করার কোনো অধিকার তোর নেই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা আরাফ : আয়াত ১১-১৩) শয়তানকে যখন আল্লাহ তাআলা বেহেশত থেকে বের করে দিলেন, তখন শয়তান আল্লাহর কাছে মানুষের ক্ষতি করার জন্য বেশি কিছু ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছেন। আর তাহলো- >> কেয়ামত পর্যন্ত হায়াত লাভ। >> মানুষকে ধোকা দেয়ার ক্ষমতা লাভ। >> সব দিক থেকে মানুষকে গোমরাহ করার ক্ষমতা লাভ। শয়তানকে দেয়া ক্ষমতার বিবরণও আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন- >> সে (শয়তান) বলল, ‘সে দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন, যেদিন তাদের (আদম সন্তানকে) পুনরুজ্জীবিত করা হবে।’ >> তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত।’ >> সে (শয়তান) বলল, ‘যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, সে কারণে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আপনার সোজা পথে বসে থাকব। >> তারপর অবশ্যই আমি তাদের কাছে তাদের সামনে থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে, তাদের বাম দিক থেকে উপস্থিত হব। আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৪-১৭) আল্লাহ তাআলা শয়তানকে তার চাহিদা মোতাবেক কেয়ামত পর্যন্ত হায়াত দান করেছেন। মানুষকে পথভ্রষ্ট করে থাকে। মানুষের শরীরের রগে রগে বিচরণ করতে পারে। মানুষকে সব দিক থেকে বিপদে ফেলার কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। সে কারণেই মানুষ শয়তানে পাতা ফাঁদে পা দিয়ে গোনাহ করে থাকে। শয়তানের প্ররোচনায় মানুষের গোনাহ করা একটা স্বাভাবিক বিষয়। এতে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা শয়তান আল্লাহর সঙ্গে এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। আল্লাহও বান্দাকে তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা করার সহজ বিধান রেখেছেন। যখনই কোনো আদম সন্তান শয়তানের প্ররোচনায় গোনাহ করবে। আর পরক্ষণেই গোনাহ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে তাওবা করবে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। হাদিসে এসেছে- হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তান চরম গোনাহগার। এদেরমধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে তাওবাকারীরা।’ (তিরমিজি, ইবজেন মাজাহ) সুতরাং শয়তানের প্ররোচনায় হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। মহান আল্লাহ তাআলা শয়তান যেমন ক্ষমতা দিয়েছেন তেমনি পথহারা মানুষকে ক্ষমা করে দিতে তিনি খোলা রেখেছেন তাওবার দরজা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিক পথে থাকার তাওফিক দান করুন। তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।


❖ আল্লাহ তায়ালা ১০০টি রহমতের মধ্যে সর্বমোট কতটি রহমত পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ একটি। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তাআ’লা আসমান যমীন সৃষ্টি করার দিন একশটি রহমত সৃষ্টি করলেন। প্রতিটি রহমত আসমান ও যমীনের মধ্যস্থল পরিপূর্ণ (বিশাল বড়)। অতঃপর তিনি তার মধ্য হতে একটি রহমত পৃথিবীতে (সবার মাঝে) অবতীর্ণ করলেন। ঐ একটি রহমতের (অংশ পাওয়ার) কারণেই মা তার সন্তানকে মায়া করে এবং হিংস্র প্রাণী ও পাখীরা একে অন্যের উপর দয়া করে থাকে। অতঃপর যখন কিয়ামতের দিন হবে, তখন আল্লাহ এই রহমত দ্বারা সংখ্যা পূর্ণ করবেন। (সহীহ বুখারীঃ ৬৪৬৯)

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট