কুরআন শিক্ষা না করার পরিনতি


 কুরআন শিক্ষা না করার পরিনতি সম্পর্কে কুরআন এবং হাদিসে যা বলা হয়েছেঃ ১। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভিযোগ পেশ: কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার অনুমতিতে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাতের জন্য শাফায়াত চাইবেন। কিন্তু যারা কুরআন শিক্ষা করেনি, কুরআনের যেসব হক রয়েছে তা আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ পেশ করবেন। কুরআনে এসেছে :

﴿ وَقَالَ ٱلرَّسُولُ يَٰرَبِّ إِنَّ قَوۡمِي ٱتَّخَذُواْ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ مَهۡجُورٗا ٣٠ ﴾ [الفرقان: ٣٠] অর্থ: ‘আর রাসূল বলবেন, হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে’ [সূরা আল-ফুরকান-৩০] ইবন কাসীর বলেন, কুরআন না পড়া, তা অনুসারে আমল না করা, তা থেকে হেদায়াত গ্রহণ না করা, এ সবই কুরআন পরিত্যাগ করার শামিল। ২। কিয়ামতের দিন অন্ধ হয়ে উঠা: যে কুরআন শিখা থেকে থেকে বিমুখ হয়ে থাকল, সে কতইনা দুর্ভাগা! আলকুরআনে এসেছে, ﴿ وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِي فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةٗ ضَنكٗا وَنَحۡشُرُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ أَعۡمَىٰ ١٢٤ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرۡتَنِيٓ أَعۡمَىٰ وَقَدۡ كُنتُ بَصِيرٗا ١٢٥ قَالَ كَذَٰلِكَ أَتَتۡكَ ءَايَٰتُنَا فَنَسِيتَهَاۖ وَكَذَٰلِكَ ٱلۡيَوۡمَ تُنسَىٰ ١٢٦ ﴾ [طه: ١٢٤، ١٢٦] অর্থ: আর যে আমার যিক্র (কুরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, নিশচয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থয় উঠাবো। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন ? অথচ আমিতো ছিলাম দৃষ্টিশক্তিসম্পন্নণ? তিনি বলবেন, অনুরুপভাবে তোমার নিকট আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অত:পর তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল’ [সূরা তাহা-১২৪-১২৬]। ৩। মূক, বধির অবস্থায় ঊঠা: সবচেয়ে বড় হেদায়েত আল-কুরআন প্রত্যাখ্যানকারীদের কবর হবে সংকীর্ণ, যার দরুন তাদের দেহের পাঁজরগুলো বাঁকা হয়ে যাবে। অবশেষে কিয়ামতের দিন মূক ও বধির হয়ে উঠবে । আলকুরআনে এসেছে : ﴿ وَنَحۡشُرُهُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ عَلَىٰ وُجُوهِهِمۡ عُمۡيٗا وَبُكۡمٗا وَصُمّٗاۖ مَّأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُۖ كُلَّمَا خَبَتۡ زِدۡنَٰهُمۡ سَعِيرٗا ٩٧ ﴾ [الاسراء: ٩٧] আমি কিয়ামতের দিন তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায়, মূক অবস্থায়, বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। যখন জাহান্নামের আগুন নির্বাপিত হওয়ার উপক্রম হবে আমি তখন তাদের জন্য অগ্নি আরও বাড়িয়ে দেব। [সূরা বনি-ঈসরাইল:৯৭] ৪। গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত: কুরআন শিক্ষা না করা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শামিল। কুরআনে এসেছে, ﴿أُوْلَٰٓئِكَ كَٱلۡأَنۡعَٰمِ بَلۡ هُمۡ أَضَلُّۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡغَٰفِلُونَ ١٧٩ ﴾ [الاعراف: ١٧٨] অর্থ: ‘এরা চতুস্পদ জন্তুর ন্যায় বরং এরা তাদের চেয়েও আরো অধম ও নিকৃষ্ট এরাই হলো গাফেল’ [সূরা আরাফ-১৭৯] । ৫। কুরআন দলিল হিসাবে আসবে: কুরআন শিক্ষা থেকে বিরত থাকার কারণে কুরআন তার বিপক্ষের দলিল হিসাবে উপস্থিত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন : «وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ» অর্থ: কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষের দলীল। [সহীহ মুসলিম: ৩২৮ ] ৬। জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে: জাহান্নামের মত ভয়াবহ কঠিন জায়গা আর নেই। কুরআন শিক্ষা না করার কারণে জাহান্নামে যেতে হবে। নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «الْقُرْآنُ مُشَفَّعٌ ، وَمَا حِلٌ مُصَدَّقٌ ، مَنْ جَعَلَهُ إِمَامَهُ قَادَهُ إِلَى الْجَنَّةِ ، وَمَنْ جَعَلَهُ خَلْفَ ظَهْرِهِ سَاقَهُ إِلَى النَّارِ.» অর্থ: ‘কুরআন সুপারিশকারী এবং তাঁর সুপারিশ গ্রহণযোগ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি কুরআনকে সামনে রেখে তাঁর অনুসরণ করবে, কুরআন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি একে নিজ পশ্চাতে রেখে দিবে, কুরআন তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে’ [সহীহ ইবনে হিববান : ১২৪]। ৭। আখেরাতে জবাবদিহী করতে হবে: কুরআন শিক্ষায় যথাযথ ভুমিকা পালন না করলে এ বিষয়ে আখেরাতে জবাবদিহী করতে হবে । তা‘আলা বলেন, ﴿ وَإِنَّهُۥ لَذِكۡرٞ لَّكَ وَلِقَوۡمِكَۖ وَسَوۡفَ تُسۡ‍َٔلُونَ ٤٤ ﴾ [الزخرف: ٤٤] অর্থ: নিশ্চয় এ কুরআন তোমার জন্য এবং তোমার কওমের জন্য উপদেশ। আর অচিরেই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে। [সূরা যুখরুফ : ৪৪] আল্লাহ আমাদের কুরআন শিক্ষাকে সহজ করে দিন আমিন।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট