কেনো কবুল হয়না ?

 


জেনে নিন দুয়া কেনো কবুল হয়না। কিছু কিছু মানুষ আল্লাহর কাছে দুয়া করে থাকে। কিন্তু দুয়া কবুল হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। অথচ আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন, “তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।” তাহলে মানুষ কিভাবে আল্লাহর কাছে দুয়া করলে তা কবুল হবে? আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উষায়মিন রাহি’মাহুল্লাহ এই প্রশ্নের উত্তরে বলেনঃ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা। দরূদ ও সালাম পেশ করছি আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবার এবং সকল সাহাবীর উপর। মুসলমান ভাইদের জন্য আল্লাহর কাছে আকীদাহ ও আমলের ক্ষেত্রে সঠিক পথের তাওফীক প্রার্থনা করছি।

আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা আমার ইবাদত করতে অহংকার করে, তারা শীঘ্রই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” সুরা গাফিরঃ ৬০। প্রশ্নকারী বলেছেন যে, তিনি আল্লাহর কাছে দুয়া করে থাকেন। অথচ আল্লাহ তার দুয়া কবুল করেন না। ফলে তার কাছে এই অবস্থা কঠিন বলে মনে হয়। বিশেষ করে আল্লাহতো ওয়াদা করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দুয়া করে, আল্লাহ তার দুয়া কবুল করবেন। আল্লাহ কখনই ওয়াদা খেলাফ করেন না। উক্ত প্রশ্নের জবাবে আমরা বলব যে, দুয়া কবুলের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। তা সর্ববস্থায় দুয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান থাকতে হবে। প্রথম শর্তঃ একাগ্রচিত্তে আল্লাহর কাছে দুয়া করা। অন্তরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে, এই বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর কাছে দুয়া করা যে, আল্লাহ কবুল করতে সক্ষম। দুয়া করার সময় এই আশা রাখতে হবে যে, আল্লাহ আমার দুয়া কবুল করবেন। দ্বিতীয় শর্তঃ দুয়া করার সময় এই কথা অনুভব করবে যে, দুয়া কবুলের জন্য সে আল্লাহর প্রতি খুবই মুখাপেক্ষী। শুধু তাই নয়, বরং একথাও অনুভব করবে যে, একমাত্র আল্লাহই বিপদগ্রস্ত ফরিয়াদকারীর ফরিয়াদ শ্রবণ করেন এবং তিনিই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। যদি এ কথা অনুভব করে যে, সে আল্লাহর দিকে মুখাপেক্ষী নয় এবং আল্লাহর কাছে তার কোন প্রয়োজনও নেই; বরং দুয়া করাটা যেন একটা অভ্যাসমাত্র তাহলে এধরণের দুয়া কবুল না হওয়ারই উপযুক্ত। তৃতীয় শর্তঃ হারাম খাওয়া থেকে দূরে থাকবে। কারণ বান্দা এবং তার দুয়া কবুল হওয়ার মধ্যে হারাম রুযী প্রতিবন্ধক হয়ে থাকে। সহীহ হাদীস প্রমাণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ব্যতীত অন্য কিছু কবুল করেন না। আল্লাহ তাআ’লা রাসূলদের প্রতি যা নির্দেশ দিয়েছেন, মুমিনদের প্রতিও তাই নির্দেশ দিয়েছেন।” আল্লাহ বলেন, “হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত থেকে আহার্য গ্রহণ কর এবং সৎ কর্ম কর।” সুরা মুমিনুনঃ ৫১। আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত সামগ্রী থেকে আহার গ্রহণ কর, যা আমি তোমাদেরকে রুযী হিসেবে দান করেছি।” সুরা আল-বাকারাঃ ১৭২। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সেই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, “যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করে এলোমেলো চুল ও ধূলা মিশ্রিত পোশাক নিয়ে অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে আকাশের দিকে দুই হাত তুলে ডাকতে থাকেঃ হে প্রতিপালক! হে রব!! অথচ সে ব্যক্তির পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত, এমতাবস্থায় কি করে তার দুয়া কবুল হতে পারে?” দুয়া কবুলের সকল মাধ্যম অবলম্বন করা সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এ লোকের দুয়া কবুল হওয়াকে অসম্ভব মনে করলেন। দুয়া কবুলের কারণগুলো নিম্নরূপঃ - (১) আকাশের দিকে হাত তুলে দুয়া করা। কেননা আল্লাহ তাআ’লা আকাশে আরশের উপরে আছেন। আল্লাহর দিকে হাত উঠানো দুয়া কবুলের অন্যতম কারণ। হাদীসে এসেছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যন্ত লজ্জাশীল ও সম্মানী। বান্দা যখন তাঁর দিকে দুইহাত উঠিয়ে দুয়া করে, তখন তিনি হাত দুটিকে খালি অবস্থায় ফেরত দিতে লজ্জা বোধ করেন।” (২) এই লোকটি আল্লাহর একটি নাম (رب) ‘পালনকর্তা’ উচ্চারণ করে করে দুয়া করেছে। এই নামের উসীলা গ্রহণ করা দুয়া কবুলের অন্যতম কারণ। কেননা রব্ব অর্থ পালনকর্তা, সমস্ত মাখলুকাতের সৃষ্টিকারী ও পরিচালনাকারী। তাঁর হাতেই আকাশ-জমিনের চাবি-কাঠি। এ জন্যই আপনি কুরআন মজীদের অধিকাংশ দুয়াতেই দেখতে পাবেন, ‘রব্ব’ বা পালনকর্তা শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহ তাআ’লা নেককার লোকদের কেমন হয়, সে সম্পর্কে বলেছেন, “হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহবানকারীকে ঈমানের প্রতি আহবান করতে যে, তোমাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আন। তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! সুতরাং আমাদের সকল গুনাহ মাফ কর এবং আমাদের সকল দোষত্রুটি দূর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেক লোকদের সাথে। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দাও, যা তুমি ওয়াদা করেছ তোমার রাসুলগণের মাধ্যমে এবং কিয়ামতের দিন তুমি আমাদিগকে অপমানিত করো না। নিশ্চয় তুমি ওয়াদা খেলাফ করো না। অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দুয়া এই বলে কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, সে পুরুষ হোক বা নারী লোক হোক। তোমরা সকল নারী-পুরুষই সমান।” সুরা আলে-ইমরানঃ ১৯৩-১৯৫। সুতরাং আল্লাহর এই নামের (রব্ব) মাধ্যমে উসীলা দেয়া দুয়া কবুলের অন্যতম কারণ। (৩) এই লোকটি মুসাফির ছিল। সফর করাকে অধিকাংশ সময় দুয়া কবুলের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়। কেননা সফর অবস্থায় মানুষ আল্লাহর প্রতি অধিক মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। স্বদেশে অবস্থানকারীর চেয়ে মুসাফির আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি অধিক মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। মুসাফির এলোমেলো কেশ বিশিষ্ট ও ময়লাযুক্ত কাপড় পরিধানকারী হয়। মনে হয় সে নিজের নফসের প্রতি কোন গুরুত্বই দিচ্ছে না। আল্লাহর কাছে দুয়া করা ব্যতীত তার অন্য কোন উপায় নেই। সফরে থেকে এলোকেশ বিশিষ্ট হয়ে ও ময়লাযুক্ত পোশাক পরিহিত অবস্থায় দুয়া করা দুয়া কবুলের পক্ষে খুবই সহায়ক। হাদীসে আছে, “আল্লাহ তাআ’লা আরাফার দিন বিকাল বেলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং আরাফাতে অবস্থানকারীদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করে বলেন, “প্রতিটি অঞ্চল হতে তারা আমার কাছে এসেছে, ধূলা-মলিন পোষাক নিয়ে এবং এলোকেশ বিশিষ্ট অবস্থায়।” যাই হোক দুয়া কবুলের উপরোক্ত কারণগুলো থাকা সত্বেও কোন কাজ হলো না। কারণ একটাই তার খাদ্য-পানীয় ছিল হারাম, পোষাক ছিল হারাম এবং হারাম খেয়ে তার দেহ গঠিত হয়েছে। এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কি ভাবে তার দুয়া কবুল করা হবে?” দুয়া কবুলের এই শর্তগুলো পাওয়া না গেলে দুয়া কবুলের কোনই সম্ভাবনা নেই। শর্তগুলো বর্তমান থাকার পরও যদি দুয়া কবুল না হয়, তাহলে বুঝতে হবে কি কারণে দুয়া কবুল হয়নি, তা আল্লাহই ভাল জানেন। দুয়াকারী ব্যক্তির দুনিয়ার জীবনে এ বিষয়ে জানার কোন সুযোগ নাই। দুয়া কবুলের সকল শর্ত বর্তমান থাকার পরও দুয়া কবুল না হলে হতে পারে আল্লাহ তার উপর থেকে দুয়া কবুলের চাইতে বড় কোন মুসিবত দূর করবেন। অথবা এও হতে পারে যে, কিয়ামতের দিনের জন্য তার দুয়া সঞ্চয় করে রাখবেন এবং সেদিন তাকে অধিক পরিমাণে বিনিময় দান করবেন। কেননা ব্যক্তি দুয়া কবুলের সকল শর্ত বাস্তবায়ন করে আল্লাহর কাছে দুয়া করার পরও দুয়া কবুল করা হয়নি এবং তার উপর থেকে বড় কোন মুসিবতও দূর করা হয়নি। হয়ত বান্দা দুয়া কবূলের সকল শর্ত পূরণ করে দুয়া করেছে। কিন্তু দ্বিগুণ পুরস্কার দেওয়ার জন্য তার দুয়া কবূল করা হয়নি। একটি পুরস্কার দুয়া করার কারণে, এবং অন্য একটি পুরস্কার মুসীবত দূর না করার কারণে। সুতরাং তার জন্য দুয়া কবূলের চেয়ে মহান জিনিস তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন সঞ্চয় করে রাখা হবে। মানুষের উচিৎ হল, দুয়া ফলাফলের জন্য তাড়াহুড়া না করা। কেননা তাড়াহুড়া করা দুয়া কবুল না হওয়ার অন্যতম কারণ। হাদীসে এসেছে, “তোমাদের কেউ দুয়ায় তাড়াহুড়া না করলে তার দুয়া কবুল হয়ে থাকে। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, দুয়াতে কিভাবে তাড়াহুড়া করা হয়ে থাকে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বান্দা বলে থাকে কত দুয়া করলাম, কত দুয়া করলাম, কত দুয়া করলাম, কিন্তু কবুল তো হচ্ছে না।” তাই কারও জন্য দুয়াতে তাড়াহুড়া এবং দুয়া করতে করতে ক্লান্তি বোধ করে দুয়া করা ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়; বরং বেশী বেশী দুয়া করা উচিৎ। কারণ দুয়া একটি এবাদত। যা মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে এবং প্রতিদান বৃদ্ধি করবে। কাজেই হে দ্বীনী ভাই ও বোনেরা! ছোট-বড় এবং কঠিন ও সহজ সকল বিষয়ে আমি (শায়খ ইবনে উসায়মিন) আপনাকে বেশী বেশী দুয়া করার উপদেশ দিচ্ছি। আল্লাহ সবাইকে তাওফীক দিন (আমীন, ইয়া রাব্বাল আ’লামীন)।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট