কোরবানির ইতিহাস এবং কোরআনের শিক্ষা

 


কোরবানির ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। কোরআন থেকেই হজরত আদম (আ.) দুই ছেলে হাবিল–কাবিলের ঘটনার সূত্রে আমরা পৃথিবীর প্রথম কোরবানির খবর জানতে পারি। হাবিল–কাবিলের ঘটনায় দেখা যায়, আকাশ থেকে আগুনের ঝলক নেমে এসে হাবিলের জবাই করা কোরবানি পশুটি আল্লাহ গ্রহণ করেছিলেন। অন্যদিকে কাবিলের কোরবানিটি প্রত্যাখ্যাত হয়।

কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে দাও, যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো এবং অন্যজনের কোরবানি কবুল হলো না। তাদের একজন বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব। অপরজন বলল, আল্লাহ তো সংযমীদের কোরবানিই কবুল করে থাকেন।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ২৭)

সব জাতির মধ্যেই ছিল কোরবানির বিধান। কোরআনে আল্লাহ বলছেন ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য (কোরবানির) নিয়ম করে দিয়েছি যাতে আমি তাদের জীবনের উপকরণ হিসেবে যেসব গবাদিপশু নিয়েছি সেগুলো জবাই করার সময় তারা আল্লাহর নাম নেয়। তোমাদের উপাস্য তো একমাত্র আল্লাহ্। সুতরাং তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ করো ও সুসংবাদ দাও বিনীতদের, যাদের হৃদয় আল্লাহর নাম করা হলে ভয়ে কাঁপে, যারা তাদের বিপদ- আপদে ধৈর্য ধরে ও নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে-জীবনের উপকরণ দিয়েছি তার থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৪-৩৫)আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘আর উটকে তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। তোমাদের জন্য ওতে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে ওদেরকে জবাই করার সময় তোমরা আল্লাহ্র নাম নাও। যখন ওরা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তোমরা তা থেকে খাও আর খাওয়াও যে চায় না তাকে, আর যে, চায় তাকেও। এভাবে আমি ওদেরকে তোমাদের অধীন ক'রে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৬)

হজরত ইবরাহিম (আ.)–এর কোরবানির ব্যাপারে কোরআনে আছে:

তারপর যখন তার পিতার সঙ্গে কাজ করার মতো বয়স হলো তখন ইব্রাহিম তাকে বলল, ‘বাছা! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে আমি জবাই করছি, এখন তোমার কী বলার আছে?’ সে বলল, ‘পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তা-ই করুন। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে, আপনি দেখবেন, আমি ধৈর্য ধরতে পারি। তারা দুজনেই যখন আনুগত্য প্রকাশ করল ও ইব্রাহিম তার পুত্রকে (জবাই করার জন্য) কাত করে শুইয়ে দিল, তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, ‘হে ইব্রাহিম! তুমি তো স্বপ্নের আদেশ সত্যই পালন করলে। এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই এ ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা।’ আমি (তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে) জবাই করার জন্য দিলাম এক মহান জন্তু এবং তাকে রেখে দিলাম পরবর্তীদের মাঝে (স্মরণীয় করে)’। (সুরা সাফফাত: আয়াত: ১০২-১০৮)কোরআনে আছে, ‘আর আল্লাহর উদ্দেশে হজ ও ওমরাহ পূর্ণ করো, কিন্তু যদি তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হও, তবে সহজলভ্য কোরবানি করো। আর যে-পর্যন্ত কোরবানির (পশু) তার গন্তব্যস্থানে উপস্থিত না হয় তোমরা মাথা মুড়িয়ো না। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ পীড়িত হয় বা মাথায় যন্ত্রণা বোধ করে, তবে সে তার পরিবর্তে রোজা রাখবে বা সাদকা দেবে বা কোরবানি দিয়ে তার ফিয়া (খেসারত) দেবে। তারপর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে-ব্যক্তি হজের আগে ওমরাহ ক'রে লাভবান হতে চায়, সে সহজলভ্য কোরবানি করবে। কিন্তু যদি কেউ কোরবানির কিছুই না পায়, তবে তাকে হজের সময় তিন দিন ও ঘরে ফেরার পর সাত দিন এই পুরো দশ দিন রোজা করতে হবে । এই নিয়ম তার জন্য, যার পরিবার-পরিজন পবিত্র কা'বার কাছে বাস করে না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো ও জেনে রাখো আল্লাহ্ মন্দ কাজের প্রতিফল দিতে কঠোর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৬)

কোরআনে আরও আছে, ‘বলো, আমার নামাজ, আমার উপাসনা, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশে। তাঁর কোনো শরিক নেই, আর আমাকে এ ব্যাপারেই তো আদেশ করা হয়েছে যেন আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আমি অগ্রণী হই।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ১৬২-১৬৩)

কোরআনে আছে, ‘আল্লাহর কাছে ওদের মাংস বা রক্ত পৌছায় না, বরং পৌছায় তোমাদের ধর্মনিষ্ঠা। এভাবে তিনি এদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর, এজন্য যে তিনি তোমাদের পথপ্রদর্শন করেছেন। সুতরাং তুমি সৎকর্মপরায়নদের খবর দাও। আল্লাহ বিশ্বাসীদের রক্ষা করেন। তিনি কোনো বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে ভালোবাসেন না।’ (সুরা হজ: আয়াত: ৩৭-৩৮)

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে