পোস্টগুলি

এপ্রিল, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

এক সাহাবিকে নিয়ে ১৬ আয়াত নাজিল হয়

ছবি
  আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) সাহাবিকে নিয়ে কোরআনে ১৬টি আয়াত নাজিল হয়। ঘটনাটা এ রকম। একদিন রাসুল (সা.) কুরাইশ গোত্রের কয়েকজন নেতাকে ইসলাম সম্পর্কে বলছিলেন। সে সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) এসে হাজির হলেন। তিনি বললেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ, আল্লাহ আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তার থেকে কিছু আমাকে শিখিয়ে দেন।’ আল কোরআনে আছে, ‘সে (মুহাম্মদ) ভ্রু কুঁচকে মুখ ফিরিয়ে নিল, কারণ তার কাছে এক অন্ধ এসেছিল। তুমি ওর সম্পর্কে কী জান? সে হয়তো পরিশুদ্ধ হতো বা উপদেশ নিত কিংবা উপদেশ থেকে উপকার পেত? যে নিজেকে বড় ভাবে, তার প্রতি বরং তোমার মনোযোগ! যদি সে নিজেকে পরিশুদ্ধ না করে, তবে তাতে তোমার কোনো দোষ হতো না। অথচ যে কিনা তোমার কাছে ছুটে এল, আর এল ভয়ে ভয়ে, তাকে তুমি অবজ্ঞা করলে! কক্ষনো (তুমি এমন করবে) না, এ এক উপদেশবাণী, যার ইচ্ছা এ গ্রহণ করবে। এ আছে মহান, উচ্চমর্যাদাশীল, পবিত্র কিতাবে. (যা) এমন লিপিকারের হাতে (লেখা) যে সম্মানিত ও পূতচরিত্র।’ (সুরা আবাসা, আয়াত: ১-১৬) রাসুল (সা.) একটু বিরক্ত বোধ করলেন। তবে তাঁর কথায় কোনো গুরুত্ব না দিয়ে কুরাইশ নেতাদের সঙ্গেই কথা চালিয়ে গেলেন। কুরাইশ নেতা...

সাহাবিরা যেভাবে মহানবী (সা.)-কে মানতেন

ছবি
  নবীজি(সা.) র আনুগত্য প্রদর্শনে সাহাবিগণ অনন্য সব দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। প্রথমত তাঁর আনুগত্য মানে আল্লাহর আদেশ পালন। দ্বিতীয়ত তাদের অন্তরে নবীজির প্রতি যে ভালোবাসা ছিল, সেই ভালোবাসার আহ্বানে তারা সাড়া দিয়েছেন। মানুষ তার সহজে মানে, যাকে সে ভালোবাসে। আমরা মাত্র তিনটি উদাহরণ উপস্থাপন করছি। ১. জুমার দিন মসজিদের মিম্বরে উঠে নবীজি (সা.) বললেন, ‘বসো তোমরা।’ আবদুলাহ ইবনে মাসউদ (রা.) শোনামাত্র মসজিদের দরজায় বসে গেলেন। তিনি ‘বসো’ শব্দটি শুনে নিজেকে আর এক পা এগোনোর অনুমতি দেননি; যেখানে ছিলেন, সেখানেই বসে গেলেন। নবীজি তাকে দেখলেন যে, তিনি দরজার মুখে বসে গেছেন। বললেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, এগিয়ে এসো।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,০৯১) ২. আবু আবদুর রহমান ফাহরি (রা.) বলেন, নবীজির (সা.) সঙ্গে আমি হোনাইনের যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। গ্রীষ্মের দিনে আমরা প্রচণ্ড রোদের মধ্য দিয়ে চলছিলাম। একসময় সকলে গাছের ছায়ায় বসলাম। সূর্য হেলে পড়লে আমার বর্মটি পরলাম এবং ঘোড়ায় চড়ে নবীজির কাছে এলাম। তিনি তার তাঁবুতে ছিলেন। তাকে সালাম দিয়ে বললাম, আল্লাহর রাসুল, ‘আমাদের যাওয়ার সময় হয়েছে কি?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ এরপর তিনি ‘বে...

তারা সংশয়ের মধ্যে পড়ে আছে

ছবি
  সূরা কাফ পঞ্চম আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন— بَلۡ كَذَّبُوۡا بِالۡحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمۡ فَهُمۡ فِیۡۤ اَمۡرٍ مَّرِیۡجٍ -"তাদের কাছে সত্য আসার পর তারা তা অস্বীকার করেছে, কাজেই এখন তারা সংশয়ের মধ্যে পড়ে আছে।" এখানে মারিজ শব্দের অর্থ সংশয়। এর আরেকটি অর্থ হলো disturbance. বিরক্তিকর অবস্থা, অস্থির অবস্থা, অশান্তি। আপনি হয়তো ভাবছেন, তারা তো মন যা চায় তাই করতে পারে। তাদেরকে তো কোন বিধি-নিষেধ মানতে হয় না। আর এটা তো তাদেরকে সুখী করার কথা। তারা কেন অস্থির অবস্থায় থাকবে? জানেন কী হয় তখন, যখন আপনার মন যা চায় তাই করতে পারেন? ডিস্টারবেন্স। অস্থিরতা। যখন আপনার সামনে অনেকগুলো চয়েস থাকে, অনেকগুলো বিকল্প থাকে—এটা ভালো জিনিস না। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিচ্ছি। আপনাদের অনেকের বাসায় টিভি আছে, ডিস এন্টেনার কানেকশন আছে, হয়তো কয়েকশো চ্যানেল আছে। রিমোটটা হাতে নিয়ে মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা কী করে? একটার পর একটা চ্যানেল খালি পাল্টাতে থাকেন, আচ্ছা এখানে কিছু দেখি, না ওইখানে মনে হয় আরও ভালো কিছু হচ্ছে, কিছুক্ষণ খেলা দেখি, না একটা মুভি দেখি... না দেখি ওই চ্যানেলে কি হচ্ছে—এভাবে কয়েক ঘন্টা ...

জিনের রূপ বৈশিষ্ট্য

ছবি
  আল্লাহ বলেছেন, ‘আর আমি তো বহু জিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা বোঝে না। তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না এবং তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে মা-এরা পশুর মতো, বরং তার চেয়েও ভই। এরাই অবহেলাকারী।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৭৯) বেশ কিছু বিশুদ্ধ বর্ণনা থেকে জানা যায়, শয়তানদের জিহ্বা ও লালা আছে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘তিনি একবার নবীজির (সা.) পেছনে ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন। হঠাৎ নবীজি তিলাওয়াতের মাঝে এদিক-সেদিক করে ফেলেন। নামাজ শেষ করে তিনি বলে ওঠেন, তোমরা যদি আমাকে আর ইবলিসকে দেখতে পেতে! আমি তাকে জাপটে ধরে তার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করছি। এমনকি আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি আর তর্জনীতে তার লালার শীতলতা টের পাচ্ছিলাম। আমার ভাই সুলাইমানের দোয়া না থাকলে আজ সকালে তোমরা তাকে মসজিদের খুঁটিতে বাঁধা অবস্থায় পেতে। আর মদিনার বাচ্চারা তাকে নিয়ে খেলা করত।’ (মুসলিম, হাদিস: ৫৪২)রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জিনেরা তিন ধরনের। প্রথম প্রকার হলো, যাদের পাখা আছে, যার সাহায্যে তারা বাতাসে উড়তে পারে। দুই. যারা কুকুর ও সাপের বেশ ধরে থাকে। তিন. যারা এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়...

নিশ্চয় আমাদের রব ক্ষমাশীল

ছবি
  যখন বিশাল কিছু হয়, তার জন্য প্রস্তুতিটাও হয় বড় আকারের। কত যে আয়াতে, কত যে সূরায় আল্লাহ তাআলা হাশরের দিনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করেছেন...শিঙ্গার আওয়াজ থেকে শুরু করে, আকাশ ছিঁড়ে ফেলা, চন্দ্র সূর্যের ধ্বংস হওয়া, পাহাড়গুলো তুলোর মতো উড়তে থাকা, সাগরগুলোকে বিস্ফোরিত করা, ফেরেশতাদের সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া, আল্লাহর সিংহাসনের আগমন, জান্নাত এবং জাহান্নাম কে নিয়ে আসা—এই যে এতো বিশাল আয়োজন, কোন সেই বৃহৎ ইভেন্টের জন্য? কখনো অন্তর দিয়ে তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছেন? শুধু আমার কৃত কর্মগুলো হিসাবের জন্য, শুধু আপনার কৃত কর্মগুলো হিসাবের জন্য। আল্লাহর কাছে আমাদের কর্মগুলো এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ!! অথচ আমরা মনে করি আমাদের কৃত কর্মগুলো ছোটখাটো বিষয়।   এই জগতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলো বড় কিছুর দিকে নিয়ে যায়। আর বিচার দিবসে কী হবে? সেদিন বিশাল বিশাল ব্যাপারগুলো ঘটবে আমার আপনার একেবারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমলগুলোর হিসাব নিকাশের জন্য।  তাই, আমাদের মুখ থেকে নির্গত হওয়া কোনো শব্দকে আমরা ছোটো করে দেখি না। আমাদের কৃত কাজগুলোকেও আমরা হালকাভাবে দেখি না। আমাদের এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজগুলো ...

যদি তাওবা না করেন

ছবি
  অনেক সময় ভয়াবহ কোন পাপ করে ফেলার পর আমরা একদম হতাশ হয়ে পড়ি। মনে মনে ভাবি—আল্লাহ কোনদিন আমাকে মাফ করবেন না। শয়তান আসলে আপনার অন্তরে এই অজুহাতটা তৈরি করে, যেন আপনাকে দিয়ে আবারো পাপটা করানো যায়। কারণ আপনি যদি হতাশ হয়ে পড়েন কী করবেন তখন, আবারো সেই পাপ করবেন বা আরো ভয়াবহ কোন পাপ। অথচ আল্লাহ কী চান? আল্লাহ চান আপনি যেন এই পাপের জন্য অনুতপ্ত হন, লজ্জিত হন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। এরপর নিজেকে ঠিক করে নেন। পরিশুদ্ধ করে নেন। তারপর সামনে এগিয়ে যান। আরো বেশি বেশি ভালো কাজ করেন, যেন এই পাপের মন্দ প্রভাবটা দূর হয়ে যায়। কারণ কোরআনে এসেছে, ইন্নাল হাসানাতি ইউজহিবনাস সাইয়েয়াত। অর্থাৎ নিশ্চয়ই ভালো কাজ মন্দ কাজকে দূর করে দেয়। আর শয়তান চায়, আপনি যেন একদম হতাশ হয়ে পড়েন। তাহলে সে আপনাকে দিয়ে আরো বেশি বেশি খারাপ কাজ করাতে পারবে। তাই তওবা করে ফিরে আসুন। আপনার মনে হতে পারে, আমি আল্লাহর এত ক্ষুদ্র একটি সৃষ্টি, আমাকে তো ক্ষমা করার দরকার নাই আল্লাহর, আল্লাহ কেন আমাকে ক্ষমা করতে যাবেন। আমার জন্য শাস্তি পাওয়াই ঠিক আছে। এর জবাবে আল্লাহ কি বলেন জানেন? তিনি বলেন—"বলো, হে আমার ব...

যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে তিন ধর্মের বিশ্বাস

ছবি
  এই ছোট্ট লেখায় আমি শেষ জামানার যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে তিন ধর্মের বিশ্বাস সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ। যা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ফিলিস্তিনের বর্তমান গণহত্যা বুঝতে আপনাদের সাহায্য করবে। শেষ যুগের সকল যুদ্ধ বিগ্রহ, বড় বড় ঘটনা যেমন ঈসা (আ) এর আগমন, দাজ্জালের ফিতনা এগুলো সব ফিলিস্তিন, সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন এই এলাকাগুলো কেন্দ্রিক হবে। ইসলামঃ মুসলমানদের চরম দুর্যোগের মুহূর্তে ইমাম মাহদির আগমন ঘটবে। তিনি সমগ্র উম্মাহকে একত্রিত করবেন। এ সময় বহু যুদ্ধ হবে। এর মধ্যে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। ঈসা (আ) এর আগমন হবে সিরিয়ার উমাইয়া মসজিদে। তিনি সকল যুদ্ধে জয়লাভ করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। এরপর স্বাভাবিক অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হবে। রাসূলের কবরের পাশে তাঁর কবরের জন্য একটি জায়গা বরাদ্ধ আছে। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করবে। একটি হাদিসে জেরুজালেম কেন্দ্রিক খিলাফা প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ আছে। তাই, অনেক আলেমের মতে এটা হবে ইমাম মাহদি এবং ঈসা (আ) এর মাধ্যমে। তো এরপরে আবার মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। অবস্থা এমন হবে যে পৃথিবীতে একজন মুসলমানও থাকবে না।...

জিনদের আহার্য

ছবি
  মহানবী (সা.) একবার তার সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললেন কিছু পাথর নিয়ে আসতে। তবে হাড় বা গোবর আনতে নিষেধ করলেন। আবু হুরায়রা (রা.) কাপড়ে করে কিছু পাথর এনে সেগুলো নবীজি (সা.)-এর পাশে রেখে চলে গেলেন। নবীজি (সা.) কাজ সেরে ফিরে আসার পর আবু হুরাইরা জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসুল, হাড় ও গোবরে সমস্যা কী? তিনি উত্তরে বললেন, সেগুলো জিনদের খাবার। নাসিবিন শহরে (সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে আলজাযিরার একটি নগরী) জিনদের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা সবাই খুব ভালো জিন। আমার কাছে খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোয়া করি। তাই তারা যে হাড় বা গোবরের পাশ দিয়ে যাবে, তাতেই নিজেদের জন্য খাবার খুঁজে পাবে। (বুখারি, হাদিস: ৩,৫৭৮) তাই কেউ যদি বিসমিল্লাহ বলে খাবার খায় এবং হাড় থেকে মাংস খাওয়ার পর নাপাক স্থানে না ফেলে, মুমিন জিনেরা সেই হাড় হাতে নিলে তাতে গোশত ফিরে আসবে। (তিরমিজি, হাদিস: ৩,২৫৮) আর দুষ্ট জিন ও শয়তানরা খায় এমন খাবার, যাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না। যেসব খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয়, সেগুলো তারা ছুঁয়েও দেখে না। গোবরে জিনদের পশুদের জন্য খাবার জমা হয়। তার মানে জিনদের পোষা...

আয়াতগুলো নিয়ে গভীর চিন্তা ভাবনা

ছবি
  কুরআনের আয়াতগুলো, সূরাগুলো গভীরতম তাৎপর্যপূর্ণ উপায়ে পরস্পর সম্পর্কিত। আমরা হাদিস থেকে জানি, সুরা ফাতেহার শেষ আয়াতে 'মাগদুওবে আলাইহিম' (যাদের উপর আল্লাহর ক্রোধ আপতিত হয়েছে) বলতে ইয়াহুদিদের বোঝানো হয়েছে। আর 'দল্লিন' (যারা বিভ্রান্তিতে আছে) বলতে খ্রিস্টানদের বোঝানো হয়েছে। এখন চমৎকার একটি ব্যাপার হল—সূরা বাকারার প্রথম অংশ জুড়ে ইয়াহুদীদের ব্যাপারটি আলোচনা করা হয়েছে। আর সূরা আলে ইমরানের প্রথম অংশ জুড়ে খ্রিস্টানদের ব্যাপারটি আলোচনা করা হয়েছে। সূরা বাকারায় আল্লাহ আমাদের জানাচ্ছেন কেন তিনি ইয়াহুদীদের উপর রাগান্বিত। কিভাবে তারা সত্যকে জেনে বুঝেও বারবার তা অমান্য করত। আর সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ আমাদের জানাচ্ছেন কোন কারণে খ্রিস্টানরা পথভ্রষ্ট। তারা বিভ্রান্তিতে পড়ে আছে। ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ ভুল ধারণায় নিমজ্জিত। সূরাগুলোর শুধু অনুবাদ পড়লেও একটি ধারণা পাবেন। আর তাফসীর পড়লে তো আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন। কুরআন অধ্যয়ন করার সময় পুনরাবৃত্ত এবং অন্যতম লক্ষণীয় একটি বিষয় হল, কুরআন সম্পর্কে মহান আল্লাহর নিজের মন্তব্য। আল্লাহ বলেছেন - كِتَابٌ أُ...

মর্মপীড়া থেকে উত্তরণের জন্য

ছবি
  চরম দুঃখ-দুর্দশার সময় মানসিক যন্ত্রণা লাঘব করার জন্য, দুশ্চিন্তা মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য, মর্মপীড়া থেকে উত্তরণের জন্য ইসলাম আমাদেরকে অনেকগুলো রাস্তা শিখিয়ে দেয়। তার মধ্যে একটি হলো—আশ-শাকওয়া ইলাল্লাহ। অর্থাৎ চরম দুঃখ দুর্দশার সময় আল্লাহর নিকট অভিযোগ করা। আমরা এটা কুরআন থেকে জেনেছি। ইয়াক্বুব (আ) কী বলেছিলেন ? قَالَ إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللهِ - ক্বলা ইন্নামা আশকু বাছছি ওয়াহুযনি ইলাল্লাহ। তোমাদের কাছে আমি অভিযোগ করছি না, আমি অভিযোগ করছি আল্লাহর কাছে। নবী আইয়্যুব কী বলেছিলেন ? إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ - ইয নাদা রব্বাহু আন্নি মাসসানিয়াদ দুররু ওয়া আনতা আরহামুর রহীমিন। “হে প্রভু, আমি যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছি”।  নবী মূসা কী বলেছিলেন ? হে প্রভু, আমি ফকীর। رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ - রব্বি ইন্নি লিমা আনযালতা ইলাইয়্যা মিন খইরিন ফাক্বীর। “হে প্রভু, আমি ফকীর, আমি আপনার মুখাপেক্ষী”। নবী যাকারিয়া কী বলেছিলেন ? وَاشْتَعَلَ ٱلرَّأْسُ شَيْبٗا وَلَمْ أَكُنْ بِدُعَآئِكَ رَبِّ شَقِيّٗا...

প্রতিবেশীর অধিকার

ছবি
  ইসলাম প্রত্যেক মানুষকে তার প্রতিবেশীর উপকার করা এবং তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে। এ-ক্ষেত্রে ইসলামের পরিভাষা হলো ‘ইহসান’। ইহসান একটি ব্যাপকার্থক শব্দ, যা বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক উভয় দিককে শামিল করে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার জন্য রাসুল (সা.) পরস্পরকে উপহার প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রত্যেকেই তার প্রতিবেশীকে উপহার দেওয়ার চেষ্টা করবে, চাই সামান্য খাবার হোক। এখানে কম-বেশি কোনো বিচার্য বিষয় নয়। বরং এতটুকু ভাববিনিময় করা, যার মাধ্যমে আন্তরিকতা প্রকাশ পায়। আবু যর (রা.) বর্ণনা করে বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আবু যর, তুমি কিছু রান্না করলে তাতে ঝোল বাড়িয়ে দিয়ো এবং তোমার প্রতিবেশীকে উপহার দিয়ে তাকে দেখে আসো। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬২৫) উপহার আদান-প্রদানের বিষয়টি তিনি শুধু পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং নারীদেরও আদেশ করেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) নারীদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘মুসলিম নারীগণ, তোমাদের কোনো প্রতিবেশী যেন অপর প্রতিবেশীর উপহারকে তুচ্ছ মনে না করে, যদিও তা বকরীর ক্ষুর হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৫৬৬)আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)...

‘আত-তাহিয়্যাতু’র মর্মবাণী কী

ছবি
  নামাজে দুই রাকাত বা চার রাকাতের বৈঠকে আমরা যে ‘আত-তাহিয়্যাতু’ পাঠ করি, তার আরবি নাম হলো তাশাহ্‌হুদ। তাশাহ্‌হুদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া, যা নামাজের প্রত্যেক বৈঠকে পড়তে হয়। তাশাহুদ বা আত-তাহিয়্যাতু হচ্ছে মহান আল্লাহ ও মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর একটি কথোপকথন; যা মিরাজের রাত্রিতে সংঘটিত হয়। নামাজে যে দোয়াটি পড়া হয় এর অর্থ ও মর্ম উপলব্ধি করা প্রয়োজন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমরা যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পেছনে নামাজ আদায় করতাম, তখন আমরা বলতাম, ‘আসসালামু আলা জিবরিলা ওয়া মিকাইলা ওয়া আসসালামু আলা ফুলান ওয়া ফুলান।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আল্লাহ নিজেই তো সালাম। তাই যখন তোমরা কেউ নামাজ আদায় করবে, তখন সে যেন তাশাহহুদ পড়ে । কেননা, যখন তোমরা এই দোয়া পড়বে, তখন তা আসমান ও জমিনে অবস্থানকারী আল্লাহর সব নেকবান্দার কাছে পৌঁছে যাবে।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘এরপর বান্দার কাছে যা ভালো লাগে সে দোয়া পড়ে আল্লাহর দরবারে আকুতি মিনতি জানাবে।’ (বুখারি: ৪০২; মুসলিম: ৬,২৬৫) তাশাহহুদ তাশাহহুদ উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত ত্বাইয়্যিবাতু, আসসালামু আলাইকা আই...

অলৌকিক উট

ছবি
  নবী নুহ (আ.)-এর ছেলে ছিলেন সাম। হজরত সালেহ (আ.) ছিলেন সামের বংশধর। তিনি সামুদ জাতির নবী। হিজাজ ও সিরিয়ার মধ্যস্থলে অবস্থিত ওয়াদিউল কুরা প্রান্তরে ছিল তাঁদের বসতি, বর্তমানে লোকে যাকে চেনে ‘ফাজ্জুহ নাকাহ’ বা ‘মাদায়েনে সালেহ’ নামে। ঐতিহাসিক মাসউদি বলেন, ‘সিরিয়া থেকে হিজাজে যাওয়ার পথে সামুদ সম্প্রদায়ের ধ্বংসপ্রাপ্ত বসতিগুলোর ভগ্নাবশেষ এবং তার প্রাচীন চিহ্নগুলো দেখা যায়।’ (কাসাসুল কোরআন, মুহাম্মদ হিফজুর রহমান, অনুবাদ: আবদুস সাত্তার আইনী, ১/ ১২৮) বেশ সচ্ছল ও অবস্থাপন্ন ছিল সামুদ জাতি। শক্তিতে বলীয়ান ছিল, সুখ-শান্তির কমতি ছিল না। পাথর খোদাই ও স্থাপত্যবিদ্যায় তাদের ছিল বিশেষ পারদর্শিতা। বড় বড় প্রাসাদ ও পাহাড় কেটে ঘর বানাত তারা। তাদের ছিল সবুজ-শ্যামল উদ্যান। সোনা-রুপার প্রাচুর্যে মোড়ানো জীবন। কিন্তু তারা আল্লাহকে মানত না। আল্লাহর সঙ্গে অংশীদারি করত। সালেহ (আ.) ছিলেন তাদের গোত্রের একজন। তিনি ছিলেন বিচক্ষণ, সুবক্তা ও পণ্ডিত ব্যক্তি।একদিন তিনি আল্লাহর নবী হয়ে তাদের কাছে গেলেন। তাদের একাত্মবাদের পথে আহ্বান করলেন। বললেন, ‘আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো উপাসক...

উম্মে সালামা (রা.)

ছবি
  উম্মে সালামার(রা.)পুরো নাম হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়া ইবন আল-মুগীরা। তিনি ছিলেন রূপে ও গুণে অনন্য, অভিজাত বংশোদ্ভূত এবং অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এক মহান নারী। তাঁর স্বামী আবদুল্লাহ ইবন আবদ আল-আসাদ ছিলেন ইসলামের প্রাথমিক যুগের সাহসী সাহাবিদের একজন, যিনি রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর গোপনে দাওয়াতকালে ইসলাম গ্রহণ করেন। উম্মে সালামা (রা.) ও তাঁর স্বামী দুজনেই ছিলেন ইসলামের সূচনালগ্নের প্রথম দিককার অনুসারী। তাঁর স্বামী রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচাতো ভাই, আর স্বামীর মা ছিলেন নবীর পিতৃপক্ষের ফুফু—আরওয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব। এ দম্পতি ইসলামের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যারা আবিসিনিয়ায় (বর্তমান ইথিওপিয়া) হিজরত করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম। প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শী উম্মে সালামা শিরক ও মূর্তিপূজার অযৌক্তিকতা অনুধাবন করে নিজ উদ্যোগে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবু উমাইয়া ছিলেন মক্কার এক সম্মানিত ব্যক্তিত্ব, যার উপাধি ছিল ‘যাদুর রকব’—অর্থাৎ ‘ভ্রমণকারীদের রসদদাতা’। কোনো সফরে গেলে তিনি তাঁর সঙ্গীদের খাবার আনতে দিতেন না; সকলের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও তিনি নিজেই করতেন। এমন ছিল তাঁর উদারতা ও আতিথেয়তা।  রাসুলুল্লাহ (স...

পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মোহরানা

ছবি
  সাহাবি আবু তালহা (রা.) ইসলাম গ্রহণ পূর্বে উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান (রা.)-এর কাছে বিবাহের প্রস্তাব পাঠন। উম্মে সুলাইম (রা.) নাকচ করে দেন। আবু তালহা তখন তাকে অনেক বেশি মোহর দেওয়ার প্রস্তাব করেন। উম্মে সুলাইম (রা.) বলেন, ‘আমি একজন মুশরিককে বিবাহ করতে পারি না। আবু তালহা, তুমি যার ইবাদত করো তার প্রতিকৃতি তো বানায় অমুক গোত্রের এক দাস। যদি তুমি তাকে আগুন দাও তবে তা সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে যাবে।’ আবু তালহা (রা.) তাতে বেশ কষ্ট পেলেন। তিনি তাকে আরও বেশি পরিমাণ মোহর দেওয়ার প্রস্তাব পেশ করলেন। আশা ছিল হয়তো এবার উম্মে সুলাইমের অন্তর বিগলিত হবে এবং তিনি বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত হবেন। কিন্তু উম্মে সুলাইম (রা.) অত্যন্ত বিনম্র চিত্তে বললেন, ‘আবু তালহা, তোমার মতো পুরুষকে কোনো নারী প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। কিন্তু তুমি অমুসলমান, আর আমি মুসলমান। আমার জন্য তোমার সঙ্গে বিবাহ বৈধ নয়।’ আবু তালহা (রা.) বললেন, ‘আমি তোমাকে সোনা-রুপা দিয়ে সন্তুষ্ট রাখব।’ উম্মে সুলাইম (রা.) তাতে রাজি হলেন না। কারণ, তার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ইসলাম। তিনি বললেন, ‘আমার সোনা-গয়নার প্রয়োজন নেই। আমি চাই তুমি ইসলাম কবুল করো।...

রাসুল (সা.) তাঁকে চাদর উপহার দিলেন

ছবি
  উম্মু খালিদ বিনতে খালিদ (রা.) ছিলেন খ্যাতিমান সাহাবি খালিদ ইবনে সাইদ ইবনুল আসের (রা.) মেয়ে। মক্কায় কুরাইশদের নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে দ্বিতীয়বার মুসলিমদের যে-দলটি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন, তার মধ্যে খালিদও ছিলেন। হিজরতে তিনি তাঁর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে নেন। সেখানেই জন্মগ্রহণ করেন আমা বিনতে খালিদ; যিনি উম্মু খালিদ নামে পরিচিত। খায়বার বিজয়ের পর আবিসিনিয়ায় যাওয়া মুসলিমরা মদিনায় চলে এলে খালিদ ইবনে সাঈদ (রা.)-ও পরিবার নিয়ে মদিনায় আসেন। উম্মু খালিদ মা-বাবার মুখে রাসুলের (সা.) কথা শুনেছিলেন। এবার তিনি তাঁকে স্বচক্ষে দেখতে পান। ফলে তিনিও হয়ে যান সাহাবি। তখন তাঁর বয়স কতো হবে? ছয় বা সাত বছর। একদিন রাসুল (সা.)-কে কিছু কাপড় উপহার দেওয়া হলো। একটি ছিল নকশাদার কালো চাদর। তিনি সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই চাদরটি কাকে দেব?’ সাহাবিরা ভদ্রতাবশত কিছু বললেন না। রাসুল (সা.) বললেন, ‘উম্মু খালিদকে আমার কাছে নিয়ে এসো।’রাসুলের (সা.) নির্দেশে একজন সাহাবি উম্মু খালিদকে নিয়ে এলেন। নকশাকাটা সুন্দর চাদরটি রাসুল (সা.) নিজ হাতে তাকে পরিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করলেন, ‘ব্যবহার করো এবং পুরোনো করো।’ আরবরা ‘ব্যবহার করো এবং প...