Posts

Showing posts from September, 2024

আমরা পথ চলা অব্যাহত রাখবো

Image
  সীরাহ আমাদেরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা প্রদান করে। আর তা হলো—আমরা কখনো দুর্দশা বা যন্ত্রণাকে এই সুযোগ প্রদান করবো না যেখানে এটা আমাদের সকল কর্মপ্রচেষ্টাকে বন্ধ করে দিবে এবং হতাশার চক্রে আমরা ঘুরপাক খেতে থাকবো। না, না, না। আমরা কখনো হাল ছেড়ে দিবো না। আমরা কখনোই হাল ছেড়ে দিবো না। আমরা পথ চলা অব্যাহত রাখবো। আমরা আমাদের কর্মযজ্ঞ, সংগ্রাম এবং জীবনধারা অব্যাহত রাখবো। যা-ই ঘটুক, আমরা থেমে যেতে পারি না এবং এই বলে অচল হয়ে পড়ে থেকে বলতে পারি না যে, “আমি কিছু করতে পারবো না, আমি হাল ছেড়ে দিলাম”। না!! গোটা সীরাহই একের পর এক দুর্যোগের মোকাবেলায় একের পর এক কৌশল গ্রহণের ঘটনায় সমৃদ্ধ। এই দুর্দশা এবং সমস্যাগুলো সমাধানে আপনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। আপনার যদি কাজ না থাকে, কাজের সন্ধানে নেমে পড়ুন, কাজ খুঁজতে থাকুন, নতুন দক্ষতা অর্জন করুন।  ঘরে বসে থেকে একথা বলতে পারবেন না যে, “আমার তো কোনো কাজ নেই। আমি তো কিছুই করতে পারছি না”। সীরাহ আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে যে, প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। প্লান-এ দিয়ে চেষ্টা করুন। এটা কাজ করছে না ? প্লান-বি দিয়ে চেষ্টা করুন। এটাও কাজ করছে না ? প্লান-সি দিয়ে চেষ্টা করুন। 

দরুদ শরিফ পড়ার ফজিলত

Image
  একদিন এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে নামাজ পড়ে দোয়া করল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ মাফ করো এবং আমার ওপর রহম করো!’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, ‘ওহে মুসল্লি! তুমি খুব তাড়াহুড়া করেছ। শোনো, যখন তুমি নামাজ পড়বে, তখন প্রথমে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করবে, তারপর আমার ওপর দরুদ পাঠ করবে এবং (সবশেষে নিজের জন্য) দোয়া করবে।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ি ও মিশকাত) ভক্তির সঙ্গে দরুদ শরিফ পড়লে বান্দার গুনাহ মাফ করা হয়। দরুদ পাঠের অশেষ সওয়াব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর মাত্র একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত নাজিল করেন এবং কমপক্ষে তার ১০টি গুনাহ মাফ করেন। তার আমলনামায় ১০টি সওয়াব লিপিবদ্ধ করেন এবং আল্লাহর দরবারে তাঁর মর্যাদা ১০ গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়।’ (নাসায়ি) দরুদ ফারসি শব্দ। এর অর্থ শুভকামনা বা কল্যাণ প্রার্থনা। ধর্মের পরিভাষায় দরুদ বলতে বোঝায় ‘আস সালাত আলান নবি’, অর্থাৎ নবীজি (সা.)–এর জন্য শুভকামনা। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম উচ্চারণের সময় সর্বদা ‘সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ (অর্থ: আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর ওপর) বলা হয়। এটি একটি দরুদ। আল্ল

তিনি রব

Image
  তিনি রব, যিনি দৃষ্টির অগোচরে, যাকে কল্পনা করা যায় না, যিনি বর্ণনাতীত, জাগতিক ঘটনায় যিনি বিচলিত হন না, সময়ের পরিবর্তন যার অস্তিত্বকে স্পর্শ করতে পারে না, যিনি পাহাড়ের পরিমাপ ও সাগরের গভীরতা জানেন, আরও জানেন অগণিত বৃষ্টির ফোঁটা ও গাছের পাতার পরিমাণ এবং সে সমস্ত কিছু যা দ্বারা রাত অন্ধকারে ঢেকে যায় আর দিন আলোকিত হয়ে ওঠে, আকাশ যার দৃষ্টি থেকে আড়ালে না, পৃথিবীর কোনো জায়গা যার কাছে লুকায়িত না, যিনি সাগরের গভীরতা জানেন, যার সামনে সমগ্র পাহাড়-পর্বত উন্মুক্ত। আমার জীবনের শেষ মুহূর্তকে ও শেষ মুহূর্তের আমলকে শ্রেষ্ঠতম বানিয়ে দিন আর সেইদিনকে আমার শ্রেষ্ঠতম দিন বানিয়ে দিন, যেদিন আপনার সাথে দেখা হবে। সূত্র: মুহাম্মদ ইউসুফ খান্ডালভির হায়াতাস সাহাবাহ

জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী

Image
  আসিয়া বিনতে মুজাহিম, প্রাচীন মিসরে ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ–বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল। তাঁর স্বামী ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। আসিয়া ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই, কিন্তু ফেরাউনের কোনো স্বভাব তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। তিনি এক আল্লাহর ওপর ইমান আনেন। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে, এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন তাঁকে বোঝাতে থাকেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পর্বতের মতো অবিচল, অটল। ফেরাউন তখন লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। তার সৈন্য-সামন্তরা আসিয়ার হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। ক্ষতবিক্ষত করা হয় শরীর। তবুও তিনি ইমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ইমান রক্ষা করেন। আসিয়া দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। তাঁর প্রার্থনার কথা কোরআনে এভাবে আছে, ‘আল্লাহ বিশ্বাসীদের জন্য উপস্থিত করেছেন ফেরাউন-পত্নীর দৃষ্টান্ত, যে প্রার্থনা করেছিল, “হে আমার প্রতিপালক! তোমার কাছে জান্নাতে আমার জন্য একটা ঘর তৈরি করো, আমাকে উদ্ধার করো ফেরাউন

ইসলামের শত্রু আবু জাহেলের মা সাহাবি ছিলেন

Image
  ইসলামের অন্যতম শত্রু আবু জাহেল। তার বাবার নাম হিশাম ইবনুল মুগীরা। হিশাম ছিল পৌত্তলিক। রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর নবুয়াত লাভের আগেই হিশাম ইন্তেকাল করে। আসমা বিনতে মুখাররাবার প্রথম বিয়ে হয় হিশাম ইবনে মুগীরার সঙ্গে। এই স্বামীর ঘরে তাঁর দুটি ছেলে জন্ম নেয়। একজন আবু জাহেল, আরেকজন আল-হারিস। (তাবাকাত ইবনে সাদ: ৮/২০৯) আসমার দুই ছেলের একজন ছিল ইসলামের অন্যতম শত্রু আবু জাহেল, রাসুলুল্লাহ তাকে ‘আমার উম্মতের ফেরাউন’ বলে উল্লেখ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ: ৬/৩৭৫) তাঁর আরেক ছেলে আল-হারিস ইবনে হিশাম ছিলেন রাসুলের সাহাবি। তবে প্রথম দিকে তিনিও তাঁর ভাইয়ের মতো ইসলামের বিরোধিতা করেন। বদর ও উহুদ যুদ্ধে মহানবী (সা.)–এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। মক্কা বিজয়ের পর হারিস ইবনে হিশাম ইসলাম গ্রহণ করে সাহাবি হওয়ার মর্যাদা লাভ করেন। এর পর ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত প্রায় সবগুলো যুদ্ধে ইসলামের পক্ষে অংশ নেন। (তারীখ আত-তাবারী: ১১/৯৭) আসমার প্রথম স্বামী হিশাম ইবনে মুগীরা ইন্তেকাল করলে দেবর আবু রাবীয়া ইবনুল মুগীরার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। (তাবাকাত ইবনে সাদ: ৮/২০৯) সেকালে আরবে ভাইয়ের ইন্তেকালের পর বিধবা ভাবিকে বিয়ের প্রচলন ছিল। আসমা বিনতে মুখা

আকাবার শপথের পর

Image
  মদিনার নতুন মুসলমানেরা যখন মক্কায় এসে রাসূলুল্লাহ (স) কে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অর্থাৎ আকাবার শপথের পর, তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন তাদের পুরস্কার কী হবে? এ সাহায্যের বিনিময়ে তারা কী পাবে? উত্তরে রাসূল (স) বলেছিলেন, জান্নাত। জান্নাত তোমাদের পুরস্কার। তিনি তাদের বলেননি, যদি তোমরা আমাকে সাহায্য করো তাহলে আমরা এক সাথে পারস্য এবং রোমান সাম্রাজ্য জয় করবো। ফলে তোমরা প্রত্যেকে বিশাল ধনী যাবে। না। তিনি এমনটি বলেননি। তিনি বলেছিলেন, তোমাদের পুরস্কার হলো জান্নাত। এমনকি কুরআনেও আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার পুরস্কার হিসেবে প্রথমে জান্নাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দুনিয়ার বিজয়ের কথা সেকেন্ডারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুনিয়ার বিজয়কে "উখরা বা সেকেন্ডারী" বলা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে তোমরা এটা ভালোবাসো। কিন্তু তোমাদের প্রকৃত পুরস্কার হলো জান্নাত। [সূরা সফ ৬১:১০-১৩ দেখুন] লিবিয়ার 'মরুসিংহ' ওমর আল মুখতার বিশ বছর ধরে ইতালির উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যান। তবু শেষ পর্যন্ত উনি রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু তাই বলে কি উনি পরাজিত হয়েছেন? কক্ষনো না। কারণ, মুমিনদের কাছে দ

কুরআনের একটি মিরাকল

Image
  কুরআন কথ্য ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। বক্তব্য আকারে নাজিল হয়েছে। লেখ্য ভাষায় নয়। কোনো লিখিত ফর্মে অবতীর্ণ হয়নি। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও লিখতে জানতেন না। কারণ আল্লাহ তায়ালা এটি মানুষের নিকট সুস্পষ্ট করতে চেয়েছেন যে, এই কিতাব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রচিত কোনো কিতাব নয়। এটি আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব। আচ্ছা, এখন কুরআনের একটি মিরাকল আপনাদের নিকট উপস্থাপন করতে চাই। আমি তো কয়েক ঘন্টা ধরে আপনাদের সামনে কথা বলছি। আপনাদের তো মনে নেই ঠিক ত্রিশ মিনিট পূর্বে আমি কী বলেছি। আমি নিশ্চিত। একেবারে শব্দে শব্দে সম্পূর্ণ কথাটা আপনাদের মনে নেই। আর এতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আদতে আমারও স্মরণে নেই আমি কী বলেছি। যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমি বলতে পারবো না। সম্ভবত আমি কথা বলার ফাঁকে একটি বাক্যের মাঝখানে এক সময় বলেছি 'মা-বাবা'। অথবা বলেছি 'বাবা-মা'। সম্ভবত আমি বলেছি 'প্রাইভেট কার এবং মোটর সাইকেল'। অথবা বলেছি 'মোটর সাইকেল এবং প্রাইভেট কার'। সম্ভবত আমি বলেছি 'দিন-রাত'। অথবা বলেছি 'রাত-দিন'। এগুলো তো কয়েকটি শব্দ মাত্র।

ইয়া জালালি ওয়াল ইকরামের ফজিলত

Image
  জাল জালালি ওয়াল ইকরাম মহান আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর একটি। আল্লাহকে ডাকার সময় এই নামের আগে যখন ইয়া যুক্ত করে বলতে হবে ‘জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’। নবীজি (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, ‘তোমরা সব সময় ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম পড়াকে অপরিহার্য করে নাও (তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫২৫)। অর্থাৎ সব সময় এই নাম পড়ার প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবীজি (সা.) নামাজ আদায়ের পরে বসা অবস্থায় বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, আপনি সালাম (শান্তি নিরাপত্তা প্রদানকারী, আপনার পক্ষ থেকেই সালাম (শান্তি ও নিরাপত্তা) আসে। আপনি বরকতময়, হে মহিমময় মহানুভব। (মুসলিম, হাদিস: ৫৯১-৫৯২) আল্লাহর ৯৯টি নামের মধ্যে একটি নাম হলো ‘ইয়া জালালি ওয়াল ইকরাম’। এটি ইসমে আজম বা বড় নাম। জালাল শব্দের অর্থ মর্যাদাবান এবং ইকরাম অর্থ সম্মানিত। আল্লাহ বড় বা শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে যেসব নামে ডাকা হয়, সেগুলোকে বলে ইসমে আজম। আল্লাহর এই নামটি কোরআনে এসেছে দুবার। সুরা আর রহমানের ২৭ নম্বর ও ৭৮ নম্বর আয়াতে। ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরামের অর্থ সমস্ত সৃষ্টি জগতের মালিক, যিনি সৃষ্

শিশুর খাদ্যনিরাপত্তায় ইসলামের নির্দেশনা

Image
  আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার গুণবাচক নামগুলোর অন্যতম হলো ‘রাজ্জাক’ অর্থাৎ রিজিকদাতা। তিনি মানুষ সৃষ্টি করার আগে তার রিজিক প্রস্তুত করেছেন। শিশু দুনিয়ায় আসার আগেই তার উপযোগী খাবারের আয়োজন করে রেখেছেন এবং শালদুধসহ প্রয়োজনমতো দুধ পান করানো শিশুর অধিকার এবং পিতা-মাতা, অভিভাবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে নির্দেশনা দিয়েছেন। কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জননীরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে, যারা দুগ্ধপান পূর্ণ করতে চায়। সন্তানের জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাদের (স্ত্রী ও সন্তানের) ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা।...এবং উত্তরাধিকারীরও অনুরূপ কর্তব্য।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৩৩)। ‘গর্ভধারণ ও দুগ্ধপান সম্পন্ন হয় ৩০ মাসে।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)। ‘আর দুধ পান ছাড়াতে হয় দুই বছর অন্তর।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪) শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে মায়ের দুধ পেলে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত তার অন্য কোনো খাবার প্রয়োজন হয় না। এমনকি পানির প্রয়োজন নেই। এই সময় অন্য খাবার দিলে শিশু নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। দূষিত পানির কারণে বিভিন্ন ধরনের পেটের অসুখবিসুখ হয়। মায়ের দুধ কম হলে তা বাড়ানোর জন্য মায়ের পুষ্টিকর খাবারের ব্

কিয়ামতের পূর্বে

Image
  শুরুতে একটি নিয়ম জেনে নিই। যখনই কোনো সাহাবী অদৃশ্য জগতের কিছু বলেন আমরা ধরে নিবো যে, উনি এটা রাসূলুল্লাহ (স) এর কাছ থেকে শুনে থাকবেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন-(কিয়ামতের পূর্বে) "অবস্থা এমন হবে যে, মানুষ তাদের উত্তরাধিকার বন্টন করতে পারবে না।" অর্থাৎ, গণহত্যা এবং হত্যাযজ্ঞ এতো বেশি পরিমাণে হবে যে সমগ্র পরিবারের সবার মৃত্যু হয়ে যাবে। উত্তরাধিকার বন্টন করার মত অবস্থা আর থাকবে না। "এবং মানুষ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ পেয়েও খুশি হবে না।" অর্থাৎ, সম্পদ দিয়ে কী হবে। পরিবারের কেউ তো বেঁচে নেই। ইবনে মাসউদ বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, "যুদ্ধের অবস্থা এমন ভয়াবহ হবে যে, তাদের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া পাখি মরে পড়ে যাবে।" এখন, আমাকে বলুন, মানুষ জমিনের উপর যতই তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করুক না কেন এর কোনো প্রভাব কি আকাশে পড়ে? আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া পাখির উপর এর কি কোনো প্রভাব পড়ে? না। তাহলে যুদ্ধে এমন কিছু ব্যবহার করা হবে যার ফলে উড়ে যাওয়া পাখিও মরে পড়ে যাবে। (এটা কি পরমাণু বোমার কারণে হবে? আল্লাহ ভালো জানেন।) এরপর হাদিসে বলা হলো-- "একশ জনের মধ্যে ৯৯ জন মৃত্যুবরণ ক

সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত

Image
  কুরআন কথ্য ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। বক্তব্য আকারে নাজিল হয়েছে। লেখ্য ভাষায় নয়। কোনো লিখিত ফর্মে অবতীর্ণ হয়নি। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও লিখতে জানতেন না। কারণ আল্লাহ তায়ালা এটি মানুষের নিকট সুস্পষ্ট করতে চেয়েছেন যে, এই কিতাব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রচিত কোনো কিতাব নয়। এটি আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব। আচ্ছা, এখন কুরআনের একটি মিরাকল আপনাদের নিকট উপস্থাপন করতে চাই। আমি তো কয়েক ঘন্টা ধরে আপনাদের সামনে কথা বলছি। আপনাদের তো মনে নেই ঠিক ত্রিশ মিনিট পূর্বে আমি কী বলেছি। আমি নিশ্চিত। একেবারে শব্দে শব্দে সম্পূর্ণ কথাটা আপনাদের মনে নেই। আর এতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আদতে আমারও স্মরণে নেই আমি কী বলেছি। যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমি বলতে পারবো না। সম্ভবত আমি কথা বলার ফাঁকে একটি বাক্যের মাঝখানে এক সময় বলেছি 'মা-বাবা'। অথবা বলেছি 'বাবা-মা'। সম্ভবত আমি বলেছি 'প্রাইভেট কার এবং মোটর সাইকেল'। অথবা বলেছি 'মোটর সাইকেল এবং প্রাইভেট কার'। সম্ভবত আমি বলেছি 'দিন-রাত'। অথবা বলেছি 'রাত-দিন'। এগুলো তো কয়েকটি শব্দ মাত্র।

“আমি তো জন্মাতে চাইনি! জানিনা কেন আমার পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে!"

Image
  আল্লাহ এই পৃথিবী বানিয়ে এতে কী রাখতে চেয়েছেন? একজন খলিফা। খলিফা কী করে? নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়। তারপর তিনি একটি পরীক্ষার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু, তোমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার ইচ্ছে করতে হবে, যদিও তোমার ক্ষমতা ও সামর্থ্য আছে ভুল সিদ্ধান্ত নেবার, যদিও ভুল সিদ্ধান্তটি লোভনীয়, বারবার তোমাকে ডাকছে। তবুও তোমাকে সঠিক কাজ করতে হবে আর সেই সামর্থ্য তোমার আছে। যদি তুমি সঠিক সিদ্ধান্তটি বারবার নাও... যদি কখনো ভুল করে ফেলো তবে উঠে দাঁড়িয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করো, এরপর আবার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে থাকো… যদি এই পরীক্ষায় পাশ করতে পারো তবে আমি তোমাকে পদমর্যাদা দেব এমন দিনে যাকে বলে? বিচার দিবস। যদি তুমি সেটা পাশ করো তবেই আমি তোমাকে জান্নাত দেব। আচ্ছা, এখন। এইযে নিজের মতো পছন্দ করার ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা, এটা হলো আল্লাহ্‌র বানানো সবচাইতে বড় পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষাটা বিশাল দায়িত্ব, তাই না? কারণ তিনি আপনাদের পৃথিবীতে নিজে নিজে থাকার দায়ভার দিচ্ছেন! আরবিতে এটার মানে হলো আমানাহ। শব্দটি কি? আমানাহ।إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَن يَحْمِلْنَهَا وَأَ

জমিন এবং পর্বত

Image
  আমরা পৃথিবী দিয়ে শুরু করছি। সূরা নাবায় আল্লাহ তায়ালা বলেন- "اَلَمۡ نَجۡعَلِ الۡاَرۡضَ مِهٰدًا" - "আমি কি যমীনকে (তোমাদের জন্য) শয্যা বানাইনি?" وَّ الۡجِبَالَ اَوۡتَادًا - আর পর্বতসমূহকে পেরেক? জমিনের উপর। কুরআন বর্ণনা করেছে পৃথিবী নড়াচড়া করে, ঝাঁকুনি দেয়। আর পর্বতসমূহ একে আটকে রাখে। সামলে রাখে। এখন, আরবিতে জমিনের জন্য যে শব্দ ব্যবহার করা হয় তা স্ত্রীবাচক। আর পর্বত পুরুষবাচক। জমিন আবার জন্ম দান করে। গাছ-গাছালি, লতা-পাতা জমিন থেকে বের হয়ে আসে। এ কারণে একে আবার মিহাদা বলা হয়। মিহাদ হলো মায়ের কোল। পুরুষকে বর্ণনা করা হয়েছে পরিবারের ভরণপোষণের যোগানদাতা হিসেবে। পরিবারে স্থিতিশীলতা, শান্তি-শৃঙ্খলা ইত্যাদি ধরে রাখার দায়িত্ব তার। প্রথমে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন জমিন এবং পর্বত বিবাহিত। ঠিক এরপরেই তিনি বলেন পুরুষ আর মহিলা বিবাহিত। "ওয়া খালাকনাকুম আজওয়াজা।" ব্যাপারটা চমৎকার নয় কি? জমিন এবং পর্বত একে অপরের জোড়া। মনে মনে একটি চিত্র কল্পনা করুন। বিশাল আয়তনের জমিন। আর জমিনের উপর দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন বিশাল এক পর্বত। এই প্যাসেজের শেষে গেলে দেখবেন আল্লাহ বর্ণনা করেছে

সবর আসলে কি ?

Image
  আমরা সংক্ষেপে সবর সম্পর্কে জানবো। এ বিষয়ে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। বহু সংখ্যক মানুষের দৃষ্টিতে সবর হলো—কান্না না করা। কিন্তু সীরাত থেকে আমরা দেখতে পাই যে, রাসূল (স)-ও কেঁদেছিলেন। তাই কান্না না করাটা সবর হতে পারে না। সবরের সাথে যন্ত্রণা অনুভবের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা ভুল ধারণা। অনেকের কাছে সবর অর্থ আপনি কাঁদবেন না। এটা কোথা থেকে পেলেন ? কে আপনাকে বলেছে যে, সবর অর্থ যন্ত্রণাহীনতা, সবর অর্থ দুশ্চিন্তাহীনতা, সবর অর্থ কান্না না করা ? এটা একটা ভুল ধারণা। তাহলে সবর আসলে কি ? সবর হলো একটি অভ্যন্তরীন, মনস্তাত্ত্বিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ। কিভাবে ? আপনি আপনার মনঃকষ্টকে যুক্ত করবেন সেই পুরষ্কারের সাথে যা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যাশা করেন। এটাই হলো সবর। সবরের অবস্থান আপনার মনে। এটা বড় একটা সংগ্রাম। কারণ আপনার হৃদয় শূন্যতায় ছেয়ে আছে। আপনার অস্তিত্ত্ব বিলীন হওয়ার উপক্রম— “এর পরে আমি কিভাবে বাঁচবো !” সবর অর্থ—সেই দুর্দশা, সেই যন্ত্রণা, সেই কষ্টকে আপনি যুক্ত করবেন কিসের সাথে ? আল্লাহ থেকে প্রাপ্ত পুরষ্কারের সাথে। আর যখন আপনি এটাকে আল্লাহর পুরষ্কারের সাথে যুক্ত করবেন, যখন আপনি আল্লাহর পুরষ্কারের

আমার স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব

Image
  আমরা কুরআন মজিদের একটা আয়াতের কথা অনেক সময়ই শুনি – মহান আল্লাহ বলেন – فَاذۡكُرُوۡنِىۡٓ اَذۡكُرۡكُمۡ ফাযকুরুনি আযকুরকুম – আমার যিকর (স্মরণ) করো, আমিও তোমাদের যিকর (স্মরণ) করব। – (সূরা বাকারাহ আয়াত ১৫২)   আয়াতটা আমরা শুনি ঠিকই – কিন্তু কতটুকু চিন্তা করি?   ভেবে দেখুন আপনি হয়ত কাউকে খুব পছন্দ করেন, ভালবাসেন। আপনি তার থেকে অনেক দূরে আছেন। আপনি তাকে স্মরণ করছেন। সে আপনার কাছে নেই – কিন্তু তাকে স্মরণ করতেই আপনার খুউব ভাল লাগছে, মনটায় কেমন একটা প্রচ্ছন্ন আনন্দ। কিন্তু আপনি কি গ্যারান্টি দিতে পারবেন সে-ও ঐ মুহূর্তে আপনাকে স্মরণ করছে? আপনি যদি জানতেন ঐ মুহুর্তে সে-ও আপনাকে স্মরণ করছে, তাহলে আপনার কেমন লাগত? আপনার ভাল লাগা কি বহুগুণ বেড়ে যেত না? আমরা যখন মানুষের মজলিসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কে স্মরণ করি, মহান আল্লাহ তখন ফেরেশতাদের মজলিসে আমাদের স্মরণ করেন। আমরা আল্লাহর দিকে হেঁটে গেলে, আল্লাহ আমাদের দিকে দৌড়ে আসেন! (সাহিহ মুসলিম)   কি কি ভাবে আল্লাহর যিকর করা যায়?   আল্লাহর যিকর করা যায় সালাত আদায়ের মাধ্যমে। সূরা ত্ব-হায় (আয়াত ১৪) আল্লাহ বলেন: “সুতরাং আমার ইবাদত কর, আর আমার যিকর করার জন্